গল্পের মূল চরিত্র অভাগী এবং তার ছেলে কাঙালী।
Published : 02 Aug 2025, 07:00 PM
নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে ‘অভাগীর স্বর্গ’ নামের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি গল্প রয়েছে। যেখানে লেখক মূলত সমাজের শ্রেণীভিত্তিক বৈষম্য এবং নিচু জাত হিসেবে চিহ্নিত মানুষদের ওপর সমাজের কঠোর ও অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচিত্র তুলে ধরেছেন।
গল্পের মূল চরিত্র অভাগী এবং তার ছেলে কাঙালী। তারা দুজনেই দুলে সম্প্রদায়ের মানুষ। সমাজে তাদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে প্রতিনিয়ত অপমান ও অবহেলার শিকার হতে হয়।
গল্পে দেখা যায়, জন্মের সময়ই অভাগীর মা মারা যান। সেই দুঃখজনক ঘটনার স্মৃতি বহন করে তার নাম রাখা হয় ‘অভাগী’। এরপর তার বিয়ে হলেও সেখানে শান্তি মেলে না।
স্বামী অন্য গ্রামে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করে নতুন সংসার গড়ে তোলে। সেই থেকে অভাগী ও তার ছেলে কাঙালীর জীবন এক দীর্ঘ দুঃখযাত্রা হয়ে দাঁড়ায়।
এক সময় গ্রামের এক বামুন ঘরের বউ মারা গেলে তার শবযাত্রা খুবই জাঁকজমকভাবে সম্পন্ন হয়। তা দেখে অভাগীর মনে একটি শেষ বাসনা জন্ম নেয় যে, তার মৃত্যুর পর যেন তাকেও একইভাবে শবদাহ করা হয়, আর তার ছেলে কাঙালী যেন মুখাগ্নি করে। এটা ছিল তার শেষ চাওয়া।
গল্পের শেষদিকে অভাগীর মৃত্যুশয্যায় তার সঙ্গে কাঙালীর কথোপকথন লেখক এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে, তা সহজেই পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এ অংশটি আমার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে মিলে যায়। আমি যেন কাঙালীর মধ্যে নিজেকে খুঁজে পাই।
কারণ, বাবার মৃত্যুর পর আমার জীবনেও একমাত্র ভরসা আমার মা। কাঙালী যেমন মাকে ছাড়া অসহায়, তেমনি আমিও মায়ের বাইরে কোনো কিছুকে জীবনের আশ্রয় ভাবতে পারি না। মৃত্যুর মুহূর্তে মা-ছেলের কথোপকথনে যেন আমি নিজের ভবিষ্যৎ দেখে ফেলি।
গল্পটি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে, হয়ত অভাগীর শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে। কিন্তু সমাজের নির্মম বাস্তবতায় সেই চাওয়াও অপূর্ণ থেকে যায়। শুধুমাত্র নিচু জাত এবং অর্থের অভাবের কারণে মা-ছেলেকে ভয়ানক অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়।
আমরা কে কোন জাত বা সম্প্রদায়ে জন্মাব তা আমাদের হাতে নেই। জাত-ধর্ম-বর্ণ এসব মানুষের বানানো পরিচয়, যার ছায়ায় আমরা মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করি। অথচ প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত আমরা সবাই মানুষ।
শরৎচন্দ্রের এই গল্প মনে করিয়ে দেয় যে, এ সমাজের সামন্তবাদী কাঠামো এখনো কতটা অমানবিক ও বৈষম্যমূলক।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ।