বিজ্ঞান শিক্ষক বললেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর সামান্য করে বাড়ছে।
Published : 22 Oct 2025, 06:32 PM
আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। গ্রীষ্মের এক দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি, আকাশটা অদ্ভুত ধূসর। আগের মত নীল নেই, রোদও যেন একটু বেশি জ্বলে উঠেছে।
সেদিন মনে হচ্ছিল, গরমে ফ্যানের বাতাসও যেন কাজ করছে না। অবাক হয়ে ভাবলাম, এমন গরম আগে তো পড়ত না। ঠিক তখনই বাবার পড়া খবরের কাগজে দেখি, এবারের গ্রীষ্মে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সেদিনই প্রথম মনে হল, পৃথিবী কি সত্যিই গরম হয়ে যাচ্ছে?
পরদিন স্কুলে বিজ্ঞান শিক্ষক বললেন, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর সামান্য করে বাড়ছে। কারণ আমরা নিজের অজান্তেই প্রকৃতিকে ক্ষতি করছি। গাছ কাটা, কারখানার ধোঁয়া কিংবা প্লাস্টিক পোড়ানোর ধোঁয়া বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এই গ্যাসগুলো সূর্যের তাপ আটকে রাখে, যেন কাঁচের ঘরের মত। ফলে পৃথিবী ধীরে ধীরে উষ্ণ হয়ে উঠছে। তখনই বুঝলাম, বিষয়টা শুধু বইয়ের নয়, আমাদের চারপাশেই ঘটছে।
আমাদের বাড়ির পেছনে একটা পুরোনো আমগাছ ছিল। প্রতিদিন বিকেলে আমি সেখানে বসতাম। কিন্তু সেই বছর দেখি গাছটার পাতা শুকিয়ে গেছে, কাণ্ডের রং ফিকে হয়ে গেছে। আগে যে গাছটা ছায়া দিত, এখন সেটাই ক্লান্ত হয়ে ঝুঁকে আছে।
মনে হল, এই গাছটাও কি গরমে কষ্ট পাচ্ছে? সেদিন আমার খুব খারাপ লেগেছিল। যেন প্রকৃতি নিজেই বলছে, আমি আর পারছি না।
সেই দিন থেকেই আমি খুঁজে দেখতে শুরু করলাম, কেন পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। ইউটিউবে ভিডিও দেখি, খবরের কাগজ পড়ি। জানতে পারলাম, এটা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এর ফলে গলছে বরফের পাহাড়, বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাও বাড়ছে।
একদিন ভাবলাম, শুধু জানলেই হবে না কিছু করতে হবে। তাই স্কুল ছুটির পর আমি আর কয়েকজন বন্ধু মিলে স্কুলের পেছনে গাছ লাগালাম। প্রতিটি গাছের দায়িত্ব নিলাম একজন করে।
আমি নিলাম আমগাছের দায়িত্ব। প্রতিদিন জল দিতাম। কয়েক সপ্তাহ পর দেখি, নতুন পাতা গজিয়েছে।
নবম শ্রেণিতে উঠার পর দেখলাম, গাছ লাগানো জায়গার আশপাশে গরমটা তুলনামূলক কম। দুপুরেও ছায়ায় বসলে ঠান্ডা লাগে। বুঝলাম, প্রকৃতি আমাদের মতই। আমরা তাকে যত ভালোবাসি, সে তত শান্ত থাকে।
সেই থেকে আমি ছোট ছোট নিয়ম মানতে শুরু করি। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে লাইট ও ফ্যান বন্ধ রাখি, প্লাস্টিক ব্যাগ সর্বোচ্চ কম ব্যবহারের চেষ্টা করি, পরিবারের সবাইকে গাছ না কাটতে উৎসাহিত করি। বন্ধুরা প্রথমে হাসলেও পরে তারাও কেউ কেউ অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে শুরু করল।
আমাদের এই ছোট প্রচেষ্টা দেখে একদিন ভূগোল শিক্ষক বলেছিলেন, তোমরা ছোট, কিন্তু কাজটা বড়। সত্যিই আমি মনে করি, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় শিশুদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শিশুরাই ভবিষ্যতের পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: সিলেট।