তার ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি ১৯৬৪ সালে অর্জন করে ‘আদমজী পুরস্কার’।
Published : 19 Aug 2025, 07:13 PM
বাংলা সাহিত্য আর চলচ্চিত্রে যাদের অবদান অনস্বীকার্য, তাদের মধ্যে একজন জহির রায়হান। এই চলচ্চিত্র নির্মাতা, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিকের জন্মদিন ১৯ অগাস্ট।
১৯৩৫ সালের এই দিনে ফেনীর মজুপুর গ্রামে জন্ম নেন তিনি। তার আসল নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ, আর ডাকনাম জাফর। তার বাবার নাম মোহাম্মদ এমদাদউল্লাহ আর মায়ের নাম সৈয়দা সুফিয়া খাতুন।
জহির রায়হান ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। নানা পরিচয়ে পরিচিত এই কিংবদন্তী সাংবাদিকতাও করতেন। তার সাহিত্য ও সাংবাদিক জীবনের শুরু ১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে। এরপর খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকায় কাজ করেন এবং ১৯৫৬ সালে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন ‘প্রবাহ’ পত্রিকায়।
১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প ‘সূর্যগ্রহণ’। এরপর একে একে জন্ম নেয় কালজয়ী সব রচনা- হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কতদিন, তৃষ্ণাসহ অসংখ্য উপন্যাস।
এর মধ্যে হাজার বছর ধরে উপন্যাসটি ১৯৬৪ সালে অর্জন করে ‘আদমজী পুরস্কার’। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তাকে মরণোত্তর বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়।
জহির রায়হান ১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’ নির্মাণের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭০ সালে নির্মাণ করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্রটি। এরপর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। ২০ মিনিটের এ প্রামাণ্য চিত্রটিতে তুলে ধরা হয় হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা আর শরণার্থীদের অবস্থা।
রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা জহির রায়হানকে নাড়া দিত। ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার জেলেও যান। ভাষা আন্দোলনের সময় ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মিছিলে অংশ নিয়ে তিনি গ্রেফতার হন।
তবে জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় রচিত হয় স্বাধীনতার পর। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে মিরপুর থেকে আর ফিরে আসেননি জহির রায়হান। ধারণা করা হয়, মিরপুরে বিহারী এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান।
মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে তিনি যা দিয়ে গেছেন, তা আমাদের শিল্প-সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিল্পকে হাতিয়ার করার যে সাহস, তারই উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে তিনি বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ময়মনসিংহ।