পলাশী দিবস
নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর রাজা হওয়ার লোভে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান।
Published : 23 Jun 2025, 07:27 PM
পলাশীর আমবাগানের যুদ্ধে স্বাধীন বাংলার নবাবের পরাজিত হওয়ার দিনটি, অর্থাৎ ২৩ জুনকে পলাশী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে প্রায় ২০০ বছরের জন্য স্বাধীনতা হারায় বাংলা।
পলাশীর যুদ্ধের পটভূমি জানতে ফিরে যেতে হবে আরও আগে। ইংরেজরা প্রথমে এদেশে আসে বাণিজ্য করতে। ডাচ, পর্তুগিজ, ফরাসি ও ইংরেজ- প্রায় সবার কাছেই বাণিজ্যের জন্য বাংলা ছিল পছন্দের জায়গা।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা সহপাঠ বইয়ে উল্লেখ আছে, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতি নিয়ে ইংল্যান্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। কিন্তু, ইংরেজরা বাণিজ্যের পাশাপাশি দস্যুবৃত্তিও করতে শুরু করে।
১৬৯৮ সালে ইংরেজরা সুতানটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা- গ্রাম তিনটি কিনে নেয়। এই গ্রামগুলোকে কেন্দ্র করেই পরে কলকাতা নগরী গড়ে ওঠে।
ইংরেজরা এদেশে বাণিজ্য করতে আসা অন্যান্য বণিকদের চেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পেত। তারা বাণিজ্য করত বিনা শুল্কে। তাদের ছিল দেশীয় কর্মচারীদের বিচার করার ক্ষমতা। এছাড়া নিজস্ব টাকশালও স্থাপন করেছিল ইংরেজরা।
ইংরেজরা দিল্লির সম্রাটদের কাছ থেকে এই ক্ষমতাগুলো পেলেও বাংলার অনেক নবাব তা মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে বাংলার নবাবদের সঙ্গে ইংরেজদের ছোটখাটো লড়াই লেগেই থাকত। যদিও নবাব আলীবর্দীর বিচক্ষণতায় তার আমল পর্যন্ত এসব যুদ্ধ তেমন ব্যাপকতা লাভ করেনি।
বিপত্তি বাঁধে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সিংহাসনে আরোহনের পর। ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গ তৈরিকে কেন্দ্র করে নবাব বনাম ইংরেজদের মাঝে একবার যুদ্ধ হয়।
এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইংরেজরা প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে ক্ষমতার লোভে ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দেয় নবাব সিরাজের বড় খালা ঘষেটি বেগম ও সেনাপতি মীর জাফরসহ অনেকেই।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন সিরাজ। ইংরেজদের তুলনায় নবাবের সৈন্যসামন্ত, অস্ত্র-গোলাবারুদ সবই ছিল অনেক বেশি।
নবাবের পক্ষে যখন ৫০ হাজার সৈন্য আর ৫৩টি কামান, তখন ইংরেজদের কাছে ছিল মাত্র তিন হাজার সৈন্য আর আটটি কামান। এরপরও যুদ্ধে নবাবের হেরে যাওয়া এক বিস্ময়ের ব্যাপার!
পাঠ্যবইয়ে আরও বলা হয়েছে, নবাব ইংরেজদের শক্তির কাছে হারেননি। তিনি হেরেছেন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে। নবাবের প্রধান সেনাপতি মীর জাফর রাজা হওয়ার লোভে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মেলান। তারই নেতৃত্বে নবাবের বেশিরভাগ সৈন্য সেদিন নীরব দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে থাকে।
পলাশীর যুদ্ধ এক অন্যায় ও বিশ্বাসঘাতকতার যুদ্ধ, যেই যুদ্ধে বাংলার সমরশক্তির কোনো অভাব না থাকলেও অভাব ছিল সততা ও আন্তরিকতার। এরই ফলশ্রুতিতে বন্দি হন নবাব।
মীরজাফরের আদেশে তার পুত্র মিরনের তত্ত্বাবধানে মুহম্মদিবেগ নামের এক ঘাতক সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করে। এরই মধ্য দিয়ে বাংলার আকাশে নেমে আসে পরাধীনতার কালো শৃঙ্খল।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।