প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সমুদ্রের জীববৈচিত্রের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Published : 05 Jun 2025, 07:54 PM
বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে কিছু আবিষ্কারের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার আবার বিপদও ডেকে আনছে। প্লাস্টিক এর একটি বড় উদাহরণ।
মাত্র ২০ বছর আগেও মানুষ বাজারে পাটের ব্যাগ নিয়ে যেত। পানি রাখত মাটির কলসে। কিন্তু এখন এসব জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক আর পলিথিন।
শুধু ব্যাগ বা বোতল নয়, ঘরের আসবাব, খেলনা, ওষুধ বা প্রসাধনীর কৌটা, এমনকি রান্নার জিনিসও এখন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে।
১৮৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত ‘প্রোডাকশন ইউজ অ্যান্ড ফেইট অব অল প্লাস্টিকস এভার মেইড’ শিরোনামে প্লাস্টিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে প্লাস্টিক তৈরির কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এর ব্যবহার বাড়তে থাকে।
এই গবেষণায় আরও বলা হয়, ১৯৫০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার ৩০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন নতুন প্লাস্টিক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা গেছে। পোড়ানো হয়েছে ১২ শতাংশ। আর বাকি ৭৯ শতাংশ থেকেই গেছে প্রকৃতিতে।
প্রবন্ধটিতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, এখনকার মত চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রকৃতিতে জমে যাবে প্রায় ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৯ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হচ্ছে।
প্লাস্টিক নিয়ে কেন এত উদ্বেগ? এর উত্তরটা আমরা সবাই জানি। প্লাস্টিক সহজে পচে না। শত শত বছর ধরে এটি প্রকৃতিতে থেকে যায়। যার ফলে এটি পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শুধু তাই নয়, আধুনিক গবেষণা বলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার মানবদেহ ও প্রাণীকূলের জন্যও ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা অর্থাৎ মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে মানবদেহে এমনকি সামুদ্রিক প্রাণীর দেহেও।
বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ন্যাচার’-এ প্রকাশিত মাইক্রোপাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গবেষণায় মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব মিলেছে। এতে রক্ত জমাট বাঁধার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে পারে।
এই গবেষণায় ৩৬ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের রক্ত পরীক্ষা করে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। যারা বেশি প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার রাখেন বা খান, তাদের দেহে এর মাত্রা বেশি ছিল।
প্লাস্টিকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার সমুদ্রের জীববৈচিত্রের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা 'ইউএনইপি'র তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর ১৯ থেকে ২৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী আর সাগরে গিয়ে পড়ে। গবেষকেরা বলছেন, এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে।
এই তথ্যটি আমাদের বলছে যে, আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই থাকলে আগামীতে সমুদ্রে মাছের চাইতে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বেশি হবে।
অর্থাৎ, ভবিষ্যতে মানবজাতিকে ভয়াবহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য দরকার কঠোর আইন ও সচেতনতা বৃদ্ধি। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্লাস্টিক বিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলা।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।