'মনে হত, জীবনের প্রতিটি ঘণ্টা যেন কারও চাপিয়ে দেওয়া রুটিন অনুযায়ী চলছে।'
Published : 27 Oct 2025, 10:51 PM
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুল, সেখান থেকে ফিরে দুপুরে কোচিংয়ে যাওয়া। তারপর বিকেলে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়া আর রাতে নিজে পড়াশোনা করা। এই বৃত্তেই আটকে ছিল আমার জীবন।
মনে হত, জীবনের প্রতিটি ঘণ্টা যেন কারও চাপিয়ে দেওয়া রুটিন অনুযায়ী চলছে।
বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি যেন ভালো ফলাফল করি। তাই নবম শ্রেণিতে উঠার পর একের পর এক টিউশন যোগ হতে থাকে।
গণিত, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান আর উচ্চতর গণিত সব বিষয়ে পড়তে যেতাম আলাদা আলাদা শিক্ষকের কাছে।
এক সময় এসে বুঝলাম আমি পড়ছি না বরং আমি শুধু ছুটছি। এক টিউশন থেকে অন্য টিউশনে। কখনো নোটের স্তূপে ডুবে থাকছি। মনে হত, আমি যেন নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত এক যুদ্ধ করছি।
বিকেলে বন্ধুরা মাঠে খেলতে যেত আর আমি তখন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কোচিং সেন্টারের পথে। বুঝতে পারলাম, আমি আসলে জানার ও শেখার উপর গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমি কেবল পরীক্ষার চাপই সামলাচ্ছি।
এতে যে বিষয়গুলো একসময় ভালো লাগত, সেগুলোই পরে বোঝা মনে হতে লাগল।
একদিন কোচিং থেকে ফিরে ক্লান্ত শরীরে জানালার পাশে বসে ছিলাম। বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল। তখন মনে মনে বুঝলাম পড়াশোনার আসল অর্থ বই মুখস্থ করা নয়। পড়াশোনা হল শেখার আনন্দে হারিয়ে যেতে পারা।
সেই দিন থেকেই নিজের ভেতর একটা পরিবর্তন শুরু হয়। ধীরে ধীরে টিউশনের সংখ্যা কমিয়েছি, নিজের সময় বের করেছি, নিজের মতো করে পড়ার চেষ্টা করেছি। বুঝেছি, সাফল্য শুধু কোচিং সেন্টারের সীমানায় জন্মায় না।
এটা জন্মায় নিজের আগ্রহ, নিজের বিশ্বাস আর নিজের ভালো লাগা থেকে। পড়াশোনাকে ভালোবাসা মানে নম্বর নয় বরং নিজেকে আবিষ্কার করা।
আমি চাই একদিন আমরা সবাই ক্লাসের বাইরে, কোচিংয়ের সীমানার বাইরে জীবনের সত্যিকারের পাঠ শিখব। যেখানে শেখা মানে শুধু প্রশ্নের উত্তর নয় নিজের ভেতরের আলো খুঁজে পাওয়া।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: সিলেট।