বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের জীবন কতটা কষ্টের তা কারো অজানা নয়।
Published : 26 Oct 2025, 08:08 PM
আমার বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়। কিছুদিন আগে দেখতে পাই আমাদের উপজেলা পরিষদ মাঠে বেদে সম্প্রদায়ের একটি দল তাঁবু গেড়ে থাকতে শুরু করেছে। যেখানে শিশুরাও আছে। তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে আমি সেখানে যাই।
বেদেরা সপ্তাহে শুধু শুক্রবার কাজ না করে তাঁবুতে থাকে। তাই আমি সেখানে যাওয়ার জন্য এই দিনটিকে বেছে নিই।
প্রথমে গিয়েই তাঁবুর সংখ্যা গুনতে শুরু করি। সেখানে ১১টি তাঁবু ছিল, যেগুলো তৈরি করা হয়েছে বাঁশের চাটাই ও পলিথিন দিয়ে। এখানকার বাসিন্দারা জানান, তাদের এই দলে ৫৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০ জনই শিশু।
বেদে পল্লীর বাসিন্দাদের জীবন কতটা কষ্টের তা কারো অজানা নয়। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। আছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব।
এসব ছাপিয়ে আমার আগ্রহের বিষয় ছিল এখানকার শিশুদের জীবনযাপন ও শিক্ষার ওপর।
জানতে পারি, এই দলে যে শিশুরা আছে তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। কেউই স্কুলে যায় না। তারা মায়ের সঙ্গে জীবিকার খোঁজে বের হয়।
মায়েরা তাবিজ বিক্রি করে, সাপের খেলা দেখায়। এসব কাজে সাহায্য করাই শিশুদের কাজ। এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিশু মাঝেমধ্যে ভিক্ষাবৃত্তিও করে বলে জানতে পারি।
কথা হয় ওলিউর নামের এক শিশুর সঙ্গে। সে জানায়, তার মা-বাবা সাপের খেলা দেখায়। সে তাদের সঙ্গে প্রতিদিন যায়। পড়াশোনা করা হয় না তার। এমনকি বিকেলে খেলার সময়ও সে পায় না।
নাহিদ নামের এক শিশু জানায়, তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে একেক সময় একেক স্থানে থাকে। ফলে কোথাও কোনো স্কুলে ভর্তি হওয়া হয় না তাদের।
বাবা মায়ের সঙ্গে বাইরে না গেলে তাঁবুতে একা বসে থাকতে হয় বলে জানায় আতিকুর নামের এক শিশু। তার অভিযোগ, তাদের সঙ্গে অন্য শিশুরা খেলে না।
এ নিয়ে দুইবার বেদে পল্লীতে ঘুরে আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এই শিশুদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের কাছে খেলাধুলা, পড়াশোনা বা স্বপ্ন দেখা বিলাসিতার বিষয়। এখানকার অভিভাবকরা চান তাদের শিশুরা যেন তাদের পেশায় না এসে অন্য পেশায় যায়। কিন্তু সেই সুযোগ তারা তৈরি করতে পারছে না।
আমি মনে করি, সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সদিচ্ছাই তাদের সেই সুযোগ দিতে পারে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: নীলফামারী।