‘যদিও এই পদ্ধতিটা ভালোবাসা থেকে আসে। কিন্তু এটি শিশুদের মাঝে ভয়, উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি করে।’
Published : 07 Jul 2025, 09:53 PM
সন্তান প্রতিপালনকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘প্যারেন্টিং’। এই কাজটি সব অভিভাবক একভাবে করেন না। কেউ শিশুকে বড় করেন কঠোর শাসনের মাধ্যমে, কেউ আবার স্নেহ ও ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে।
ইউনিসেফের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওয়েসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সন্তানের প্রতি আচরণের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
‘পজিটিভ প্যারেন্টিং ভার্সেস স্ট্রিক্ট প্যারেন্টিং’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্যারেন্টিং প্রধানত তিন রকম। এগুলো হল- ইতিবাচক, কঠোর এবং টাইগার প্যারেন্টিং।
ইতিবাচক প্যারেন্টিং শিশুকে ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে। এই পদ্ধতি ভালোবাসা ও যুক্তির মাধ্যমে শেখানোর কথা বলে। এখানে বাবা-মা শিশুর ভুলকে শিক্ষা হিসেবে দেখেন।
শিশু যদি পানি ফেলে দেয়, তখন অভিভাবক তাকে সঙ্গে নিয়ে পানি পরিষ্কারের প্রস্তাব দিয়ে থাকে। এতে করে সে দায়িত্ব নিতে শেখে এবং ভয় না পেয়ে আত্ববিশ্বাসী হতে পারে।
এই পদ্ধতি সন্তানকে ভালোবাসা, সময় দেওয়া, এবং তাকে তার মত করে গ্রহণ করা, ছেলে-মেয়ে সবাইকে সমানভাবে দেখা ও আচরণে সমতা রাখার কথা বলে। এছাড়াও শিশুর কাছে কিছু প্রত্যাশা করার আগে নিজেই সেটা পালন করা হল ইতিবাচক প্যারেন্টিং।
অন্যদিকে, কঠোর প্যারেন্টিং বলতে কঠিন নিয়মকানুন, চিৎকার বা শাস্তিকে বোঝায়। যেখানে শিশুর মতামত প্রকাশের সুযোগ কম থাকে, নিজের ইচ্ছা বা আবেগ প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি প্রশ্ন করতেও নিরুৎসাহিত করা হয়।
এই পদ্ধতিতে শিশুকে বাধ্য করা হয় নিয়ম মেনে চলতে, ভুল না করতে, এবং সবসময় ভদ্র থাকতে। এজন্য শিশুকে ভয় দেখানো বা শারীরিক শাস্তিও দেওয়া হয়। কারণ বাবা-মা নিজেরাও এভাবে বড় হয়েছেন।
যদিও এই পদ্ধতিটা ভালোবাসা থেকে আসে। কিন্তু এটি শিশুদের মাঝে ভয়, উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি করে। এমনকি শিশুর বিকাশেও বাধা দেয়।
কঠোর প্যারেন্টিংয়েরই একটি ধরনের নাম টাইগার প্যারেন্টিং। যেখানে শিশুকে যেকোনো মূল্যে শিক্ষা, সহশিক্ষা বা খেলাধুলায় সেরাটা অর্জনের জন্য চাপে রাখা হয়।
ইউনিসেফ বলছে, কঠোর প্যারেন্টিং সাময়িকভাবে শৃঙ্খলা আনতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে শিশুর মধ্যে ভয়, উদ্বেগ, এমনকি মানসিক ও শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। অনেক সময় তারা নির্যাতন বা অন্যায়ের শিকার হলেও মুখ খুলতে ভয় পায়।
অন্যদিকে, ইতিবাচক প্যারেন্টিং শিশুদের মধ্যে গড়ে তোলে আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা। তারা ভবিষ্যতে হয় ভালো ছাত্র, ভালো বন্ধু, এবং ভালো মানুষ।
গবেষণা ও মনোবিজ্ঞান বারবার বলছে, ইতিবাচক প্যারেন্টিংই সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।