পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ঈদের আগের রাতে মেয়েরা হাতে মেহেদি আঁকে।
Published : 07 Jun 2025, 04:12 PM
ইসলাম ধর্মের অন্যতম বড় উৎসব ঈদুল আজহা পালিত হয় বিশ্বের নানা প্রান্তে। আমাদের দেশে নামাজ পড়ে পশু কোরবানির মাধ্যমে শুরু হয় এই উৎসব। আর ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলতে থাকে পশু আর নতুন পোশাক কেনার ব্যস্ততা। তবে দেশ ও অঞ্চলের ভিন্নতার কারণে একেক দেশে ঈদের আনন্দের ধরনও একেক রকম।
‘প্রেয়ার, হেন্না, চ্যারিটি: ঈদুল আজহা ট্র্যাডিশনস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড’ শিরোনামে ২০২৩ সালে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদুল আজহা পালনের রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদের প্রস্তুতির শুরুতেই তৈরি হয় বিশেষ মিষ্টান্ন।
অতিথি আপ্যায়ন ইয়েমেন ও সিরিয়ায় ঈদ উৎসবের অন্যতম প্রধান রীতি। এইজন্য ঘরে ঘরে থাকে ‘কুকিজ’সহ নানা ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি আয়োজন।
ঈদকে রাঙাতে বাহারি পোশাক কিনতে পছন্দ করে বাহরাইনের নারীরা। ঈদে তাদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ‘জালাবিয়া’ নামের এক ধরনের পোশাক।
লিবিয়ায় ঈদুল আজহার দিন দেখা মেলে ঘোড়সাওয়ারদের। এদিন তারা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ঘোড়া পিঠে ঘুরে বেড়ায়। এই দৃশ্য দেখে আনন্দ পায় শিশুরা।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঈদের আমেজও ভিন্নরকম। ইন্দোনেশিয়ায় মেয়েরা আগের রাতে মশাল হাতে শোভাযাত্রা বের করে। চীনের মুসলিমরা ঈদের দিন মসজিদে ধূপ জ্বালিয়ে অংশ নেয় প্রার্থনায়।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে ঈদের আগের রাতে মেয়েরা হাতে মেহেদি আঁকে। বাংলাদেশেও ঈদের আগের রাত ‘চাঁদরাত’ হিসেবে উদযাপিত হয়। এ সময় নারীরা মেহেদি দিয়ে হাতে নানা রকম আলপনা এঁকে থাকে।
আফ্রিকার দেশগুলোতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পশুর হাটগুলোতে চলে কেনাবেচা। নাইজেরিয়ায় কামান দাগিয়ে ঈদের সূচনা ঘোষণা করা হয়।
ঈদের দিন এই মহাদেশের নানা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা দরিদ্র মানুষের জন্য শত শত হাঁড়ি খাবার রান্না করে বিতরণ করে।
লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোতে মুসলিম জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও ঈদের দিনটি উদযাপন করা হয় পারিবারিক ও প্রার্থনামূলক পরিবেশে। পাশাপাশি থাকে বিশেষ রান্নার আয়োজন।
উত্তর আমেরিকায় রয়েছে এক বহুসাংস্কৃতিক চিত্র। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন শহরে অভিবাসী মুসলিমরা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করে। এরপর পরিবারের সঙ্গে তারা দিনের বাকি অংশ কাটায়। শিশুদের জন্য থাকে মুখরোচক খাবার আর খেলাধুলার আয়োজন।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী ও শরণার্থীরা স্থানীয়দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে থাকে। অস্ট্রিয়ার হ্যাবসবার্গ প্রাসাদে স্থানীয় বাসিন্দারা শরণার্থীদের সঙ্গে ঈদের খাবার ভাগাভাগি করেন। সার্বিয়াতেও বিভিন্ন সহায়তাকারী সংস্থা শরণার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করে।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ঈদ সামনে রেখে বিক্রি হয় নানা রকমের পোশাক, অলংকার ও খাবারদাবার। মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নেয় মুসলিমরা। এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে নতুন ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এছাড়া, বিশ্বজুড়ে কোরবানির ঈদের নানা মুহূর্ত ধরা পড়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ছবিতে। ‘ইন পিকচার্স: মুসলিমস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড সেলিব্রেট ঈদুল আজহা’ শিরোনামে গেল বছরের এক চিত্র প্রতিবেদনেও উঠে আসে ঈদের আনন্দ উদযাপনের নানা রূপ।
এই চিত্র প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশে কোরবানির আগে পশুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে দেখা যায়। আরও দেখা যায় শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, মোবাইলে ছবি নেওয়ার দৃশ্য। এছাড়া গত বছর ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায়ের দৃশ্যও উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।