সন্তানের জন্য ভালো একটি কাজ করতে পেরে খুশি শিশুর মা-বাবা।
Published : 02 Nov 2025, 09:17 PM
দেশের প্রথম ‘কার্বন-নিরপেক্ষ’ শিশু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার আয়ান খান রুহাব।
আট মাস বয়সী রুহাবকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির অংশীদার ঢাকা প্ল্যান্টার্স আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র তুলে দেওয়ার পর থেকেই শিশুর মা-বাবা প্রসংশায় ভাসছেন।
রুহাবের বাবা ইমরান রাব্বি, পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীনম্যানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং মা আয়শা আক্তার কিরণ, সংগঠনটির সমন্বয়ক। সন্তানের জন্য ভালো একটি কাজ করতে পেরে তারা দুজনেই খুশি।
রাব্বি হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ৫৮০টি গাছের চারা রোপণ করেছি। এগুলো নিজ বাড়ি ও নিকটাত্মীয়দের জায়গায় লাগিয়েছি। কী পরিমাণ বৃক্ষ রোপণ করলে একটি শিশু সম্ভাব্য কার্বন-নিরপেক্ষ হয়, তা হিসাব করে রোপণ করেছি আমরা।”
নিজ সন্তানের জন্য এমন একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিশুর মা কিরণ।
তিনি হ্যালোকে বলেন, “আমার রুহাবের জন্য আমরা এটা করতে পেরে খুবই খুশি। আমরা চাই সকল বাবা-মা তার সন্তানের জন্য যেন বৃক্ষরোপণ করে।”
স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয় ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে।
প্রতিষ্ঠানটির ইয়ুথ অ্যান্ড জেন্ডার বিষয়ক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সুমাইয়া বিনতে সেলিম সুধা হ্যালোকে বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের মানদণ্ড থেকে দেখা হয়েছে কোন দেশের মানুষ বছরে কতটুকু কার্বন নিঃসরণ করে। সেই হিসাব এবং একটি গাছ বছরে কতটুকু কার্বন শোষণ করতে পারে- এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ধরে রুহাবকে কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।”
এই স্বীকৃতিকে পৃথিবী বাঁচানোর আন্দোলন হিসেবে দেখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, "ভবিষ্যতেও এ ধরনের উদ্যোগ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ঢাকা প্ল্যান্টার্সকে সঙ্গে নিয়েই আরও বেশ কিছু কাজ করা হবে। অনেকে নিজেরাও কার্বন-নিরপেক্ষ হতে চান, সেই সুযোগটাও রাখা হবে।”
ঢাকা প্ল্যান্টার্সের প্রযুক্তি প্রধান রেহানুজ্জামান রেহান হ্যালোকে বলেন, “আমরা একটি ছোট ক্যালকুলেটর তৈরি করেছি, যেটি দিয়ে যে কেউ নিজের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হিসাব করতে পারে। হয়ত একশ ভাগ নির্ভুল নয়, তবে ধারণা পাওয়া যায় কতটি গাছ লাগালে একজন মানুষ নিজেকে কার্বন-নিরপেক্ষ হিসেবে দাবি করতে পারে।”
কার্বন-নিরপেক্ষতা কী
গাড়ি চালানো, রান্না করা কিংবা বিদ্যুৎ ব্যবহারের মত নানা কর্মকাণ্ডের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ছড়ায়। এই গ্যাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ডে যে কার্বন নিঃসরণ হয় তা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা জরুরি। এ থেকেই সামনে এসেছে নিজেকে কার্বন-নিরপেক্ষ করার বিষয়টি।
যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, কার্বন-নিরপেক্ষতা হল এমন এক ভারসাম্য, যেখানে মানুষ যতটা কার্বন বাতাসে ছাড়ে, প্রকৃতি বা বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ততটাই কমিয়ে আনা হয়। এতে বাতাসে বাড়তি কার্বন জমে না এবং পরিবেশ ভারসাম্য বজায় থাকে।
পৃথিবীর প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু
২০২৪ সালে ভারতের তামিলনাড়ুর দুই বছর বয়সী আদাভি বিশ্বের প্রথম কার্বন-নিরপেক্ষ শিশু হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এশিয়া বুক অব রেকর্ডস এ স্বীকৃতি দেয়। মেয়ের জীবনভর কার্বন নিঃসরণের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আদাভির মা-বাবা প্রায় ছয় হাজার গাছ রোপণ করেন।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: সাতক্ষীরা।