‘প্রায় সব গ্রাম থেকেই বাল্যবিয়ের খবর পাই। তবে কান্দানিয়া গ্রামে বাল্যবিয়ের ঘটনা নাকি বেশি ঘটে। এটা স্থানীয়রাই বলে থাকে।’
Published : 02 Nov 2025, 09:12 PM
আমার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। এই উপজেলার মানুষ আমার কাছে সরল ও পরিশ্রমী বলে মনে হয়। তা সত্ত্বেও অনেক মানুষের মধ্যে শিক্ষার অভাব ও অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায়।
তারা নানা ধরনের কুসংস্কারও মেনে চলে। এর ফলেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায়ই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। আমি এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার সাক্ষী।
একদিন হঠাৎ করেই জানতে পারি, সাফাইশ্রী গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তখনও সে বয়সে শিশু। কিছুদিন পর শুনতে পাই, সে গর্ভধারণও করেছে। শিশুর গর্ভে আরেকটি শিশু বেড়ে উঠছে, এটা ভাবতেই তো ভয়ানক অমানবিক মনে হয়।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে রাওনাট গ্রামে। সেখানে বাল্যবিয়ের শিকার হয় অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া। বিয়ের পর সে আর স্কুলে ফিরতে পারেনি। বই আর খাতার জায়গায় এখন তার হাতে সংসারের দায়িত্ব।
প্রায় সব গ্রাম থেকেই বাল্যবিয়ের খবর পাই। তবে কান্দানিয়া গ্রামে বাল্যবিয়ের ঘটনা নাকি বেশি ঘটে। এটা স্থানীয়রাই বলে থাকে।
এই গ্রামের অনেক পরিবারই এখনও ভাবে মেয়ে কৈশোরে পা দিলেই তাকে বিয়ে দিতে হবে। তা না হলে বদনাম হবে কিংবা মেয়ের বিপদ হবে। কেউ কেউ আবার দারিদ্র্যের কারণ দেখিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। অথচ তারা জানেও না নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ কতটা অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
আমার উপজেলায় এখনো দেখা যায়, বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ে উপস্থিত না থেকে পরিবারের কেউ প্রতিনিধি হয়ে বিয়ে পড়িয়ে দেয়। ধর্মীয় দিক থেকে এটি বৈধ মনে করা হলেও বাস্তবে এতে নানা জটিলতা তৈরি হয়। একে অপরকে না চিনেই শুরু করে সংসার।
উপজেলা প্রশাসন প্রায়ই অভিযান চালায়। কিছু বাল্যবিয়ে বন্ধও হয়। কিন্তু অনেক ঘটনা এখনো প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে যায়।
আমি বিশ্বাস করি, এই অবস্থা বদলাতে হলে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবারগুলোকে বোঝাতে হবে অল্প বয়সে বিয়ে মানে একটি জীবনের স্বপ্ন ছিনিয়ে নেওয়া।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: গাজীপুর।