‘এখানে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যাও কম নয়। কেউ চায়ের দোকানে, আবার কেউ রিকশার গ্যারেজে বা অন্য কোনো জায়গায় কাজ করে।’
Published : 17 Sep 2025, 09:17 PM
বস্তির শিশুদের জীবনযাপন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে কড়াইল বস্তিতে গিয়েছিলাম। এটি আয়তনের দিক থেকে ঢাকার সবচেয়ে বড় বস্তি হিসেবে পরিচিত।
সেখানে গিয়ে শিশুদের নানা দুর্ভোগের চিত্র খুব কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। আমার পর্যবেক্ষণ বলছে, এই শিশুরা সবচেয়ে বেশি লড়াই করছে স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, অনেক পরিবারে বাবা-মা ও সন্তান সবাইকে একই ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি ঢুকে যায়। নোংরা পরিবেশের জন্য চর্মরোগ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগতে হয় শিশুদের।
বস্তির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের অভাবের চিত্র দেখেছি। বাসিন্দারা বলছিল, অনেকেই অবৈধ সংযোগ থেকে পানি ব্যবহার করে। কিন্তু সে পানি নিরাপদ নয়। দূষিত পানি পান করায় শিশুরা প্রায়ই ডায়রিয়া, আমাশয় ও জন্ডিসের মত রোগে আক্রান্ত হয়।
বস্তিতে থাকা কিশোরীরাও নানা সমস্যায় পড়ে। তাদের অনেককেই ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা পড়াশোনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অল্প বয়সে বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের কারণে নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগতে হয় তাদের।
এখানে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যাও কম নয়। কেউ চায়ের দোকানে, আবার কেউ রিকশার গ্যারেজে বা অন্য কোনো জায়গায় কাজ করে। তাদের কেউ কেউ স্কুলে যাওয়ার বদলে পরিবারের হাল ধরেছে। যদিও এনজিও পরিচালিত কিছু অস্থায়ী স্কুল রয়েছে, তবুও শিশুদের বড় অংশ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলে আমার মনে হয়েছে।
নগরের ঝলমলে আলোয় ঢাকা পড়ে থাকা এই বাস্তবতা আসলে নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা। আমি মনে করি, বস্তির এই শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও নিরাপত্তা এখনই নিশ্চিত করা না গেলে একটি প্রজন্ম অন্ধকার ভবিষ্যতের পথে হারিয়ে যাবে। আর এর দায় বহন করতে হবে পুরো জাতিকেই।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।