“যাত্রী থেকে শুরু করে চালকের সহযোগী পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করে।”
Published : 01 Oct 2025, 12:39 AM
গণপরিবহনে কিশোরী ও নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে এই হয়রানি বন্ধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই বলে মনে করেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া কিশোরীরা।
সম্প্রতি এই বিষয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় কয়েক জন কিশোরীর।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত সিটি কলেজে পড়ুয়া এক কিশোরীকে সপ্তাহে পাঁচদিনই সোবহানবাগ থেকে কলেজে যাওয়া আসা করতে হয়। অভিভাবকের সঙ্গে যাওয়া আসা করলেও বাসে কখনো কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ এড়াতে পারে না সে।
সে বলে, “যাত্রী থেকে শুরু করে চালকের সহযোগী পর্যন্ত ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করে। এসব উত্যক্তকারীদের কখনো কোনো শাস্তি পেতে দেখি না।”
জনসাধারণের নিত্যদিনের ভোগান্তি কমাতে বাসের বিকল্প নেই, তবে এই বাসই কখনো কখনো বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায় বলে জানায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক কিশোরী।
সে বলে, “পাবলিক বাসে অনেক চাপাচাপি হয়। ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মেয়ের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।”
এই কিশোরীর মতে মেয়েদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত।
রাজধানীর কুর্মিটোলার সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া আরেক কিশোরী বলে, “বাসে ব্যাড টাচ পাওয়া একটা নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কিছু বলেও না, এসবের শেষ কোথায় জানি না।
“হয়রানী বন্ধে এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হোক যা দেখে আমরা স্বস্তি পাব আর দোষীরা ভয় পাবে।”
তবে হয়রানীর ঘটনায় আশেপাশে কারো কোনো সাহায্য না পাওয়া গেলে ভুক্তভোগীকেই প্রতিবাদ করতে হবে বলে মনে করে আরেক কিশোরী।
সে বলে, “ব্যাড টাচ কাকে বলে তা একদিন ফার্মগেট থেকে আগারগাঁও যাওয়ার সময় বুঝে গিয়েছিলাম। তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটার প্রতিবাদ করি। কেউ যখন এগিয়ে আসে না তখন নিজেকে নিজে সাহায্য করতে হয়।”
কন্যা সন্তানকে বাইরে পাঠিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকতে হয় অভিভাবকদেরও।
এ ব্যাপারে একজন অভিভাবক হ্যালোকে বলেন, “বাস চালকের সহযোগীরা বাসে তোলার সময় তো গায়ে হাত দিয়ে বাসে তোলে। এটা খুবই অস্বস্তিকর। সব বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হলে, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে যাত্রী ওঠানামা করালে এসব সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।”
২০২২ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশ এর যৌথ জরিপে দেখা যায়, দেশের ২৪টি জেলার ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিতভাবে এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হন।
২০১৭ সালে করা ব্র্যাকের আরেকটি গবেষণা বলছে, ৯৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে মৌখিক, শারীরিক বা মানসিক হয়রানির শিকার হন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, আইন প্রয়োগে শৈথিল্য এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাব এ সমস্যাকে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।