নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস
‘বাল্যবিয়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।’
Published : 28 May 2025, 09:59 AM
নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে গর্ভবতী নারীর যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন খাগড়াছড়ির আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জয়া চাকমা। তিনি হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় মা ও শিশুমৃত্যু এবং গর্ভবতী নারীর প্রতি অবহেলা নিয়েও কথা বলেছেন।
হ্যালো: প্রসবের সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যু কোন কোন কারণে হয়?
জয়া চাকমা: মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলো হল- প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ (পোস্টপার্টাম হেমোরেজ), উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা ও খিঁচুনি (প্রিক্ল্যাম্পসিয়া ও ইক্ল্যাম্পসিয়া)। এছাড়াও বিলম্বিত প্রসব (প্রোলং লেবার), বাধাগ্রস্ত প্রসব (অবস্ট্রাক্টেড লেবার) এবং সংক্রমণের কারণে অনেক মা মৃত্যুবরণ করেন।
নবজাতকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া (প্রিম্যাচুর বেবি), ওজন কম থাকা (লো বার্থ ওয়েট), জন্মের সময় শ্বাসকষ্ট (বার্থ অ্যাসফিক্সিয়া), জন্মগত ত্রুটি (কনজেনিটাল বার্থ ডিফেক্ট) এবং সংক্রমণ উল্লেখযোগ্য।
হ্যালো: মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে করণীয় কী?
জয়া চাকমা: সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে এবং গর্ভকালীন নিয়মিত চেক-আপ করানো উচিত। অপুষ্টি প্রতিরোধে আয়রন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এছাড়াও, জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে ও সামাজিক কুসংস্কার থেকে দূরে থাকতে হবে। এবং অবশ্যই নিয়মিত টিকা প্রদান এবং নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে কীভাবে নিরাপদ মাতৃত্বের পথে বাধা সৃষ্টি করে?
জয়া চাকমা: বাল্যবিয়ে মায়ের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। গর্ভবতী কিশোরীর রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, খিঁচুনি, গর্ভপাত ও কম ওজনের শিশু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
শারীরিক গঠন পরিপক্ক হওয়ার আগে প্রসব হলে বাধাগ্রস্ত প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যার ফলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব করাতে হতে পারে। মানসিকভাবে পরিপক্ব না হওয়ায় নিজের এবং সন্তানের যত্ন ঠিকমত নিতে পারে না, যা দীর্ঘমেয়াদী মানসিক সমস্যায় (সাইকোসিস) পরিণত হতে পারে।
হ্যালো: গর্ভবতী নারীরা পরিবারে কোন ধরনের অবহেলার বেশি শিকার হন? আপনার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই।
জয়া চাকমা: গর্ভবতী নারীদের প্রতি সামাজিক অবহেলা ও যত্নের অভাব তাদের প্রসবকালীন জটিলতা ও মৃত্যুর হার বাড়ায়। আমাদের সমাজে অনেক গর্ভবতী নারীকে বিশেষ যত্ন দেওয়া হয় না। তারা যথাযথ পুষ্টি, বিশ্রাম, নিয়মিত চেক-আপ, চিকিৎসকের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনেক সময় বঞ্চিত হন। পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, যা তাদের ঝুঁকি বাড়ায়।
সামাজিক কুসংস্কার ও ভুল বিশ্বাস তাদের ওপর প্রয়োগ করা হয়, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এই অবহেলার কারণে মাতৃমৃত্যু, নবজাতকের মৃত্যু এবং প্রসব পরবর্তী অসুস্থতা যেমন ফিস্টুলা, বন্ধ্যাত্ব, পোস্টপার্টাম সাইকোসিস এবং ভয়াভহ বিপদ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, মায়েদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, ফলে সন্তান ও নিজের যত্নও তারা নিতে পারে না।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।