চারপাশে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, যেন সুরের সঙ্গে মিলেমিশে আছে মানবতার দর্শন।
Published : 21 Oct 2025, 08:05 PM
দিনটি ছিল শনিবার। আমার এক দাদাকে সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়ার পথে রওনা দিই, কারণ কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় শুরু হয়েছে লালন স্মরণোৎসব। আমাদের সিদ্ধান্তটা হঠাৎ করেই নেওয়া।
লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় তিন দিনের এই উৎসব ও মেলার। প্রতি বছরই এ উৎসব হয়, তবে এবারের আয়োজনটা একটু ভিন্ন। কারণ তা জাতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে পালন করা হয়েছে।
তাড়াহুড়ো করে খুলনা রেলস্টেশনে গিয়ে জানতে পারি, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হল। শোভন চেয়ারের ভাড়ার সমান টাকা দিয়ে দুটি দাঁড়িয়ে যাওয়ার টিকিট কেটে রাত পৌনে ১০টার দিকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে উঠে পড়ি। ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে শুরু হয় আমাদের যাত্রা।
ঝক ঝক ঝক করে ছুটে চলা ট্রেন রাত ১টার দিকে পৌঁছায় কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে রিকশায় চেপে যাত্রা করি সাঁইজির আখড়ার দিকে।
দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, কত মানুষের সমাগম হয়েছে এবার। ভিড় ঠেলে অবশেষে পৌঁছালাম লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়িতে। প্রবেশদ্বারে লেখা সেই চিরন্তন বাণী- “মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি।”
আখড়ার পাশেই কালী নদীর তীরে বসেছে বিশাল লালন মেলা। সমাধির পাশে, নদীর ঘাটে ও আশপাশের খোলা মাঠজুড়ে ভক্ত, অনুসারী ও দর্শনার্থীদের ঢল। কেউ একতারা বাজাচ্ছেন, কেউ গাইছেন সাঁইজির গান।
চারপাশে এক অদ্ভুত প্রশান্তি, যেন সুরের সঙ্গে মিলেমিশে আছে মানবতার দর্শন। জাত-পাতের ভেদাভেদহীন, অসাম্প্রদায়িক এক আবহে মন ভরে উঠল শান্তিতে। এমন আধ্যাত্মিক পরিবেশ জীবনে আগে অনুভব করিনি।
মাঠের দক্ষিণ দিকে বিশাল মঞ্চে শিল্পীরা একের পর এক লালনগীতি পরিবেশন করছেন, দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে শুনছে।
রাত পেরিয়ে ভোর ৪টার দিকে আমরা খাওয়া দাওয়া করি। এরপর সাড়ে ৪টার দিকে প্রবেশ করি লালন জাদুঘরে। টিকিটের দাম মাত্র দশ টাকা। ভেতরে দেখতে পেলাম সাঁইজির ব্যবহৃত খড়ম, একতারাসহ নানা জিনিস। দেয়ালে টানানো ছিল শিল্পীদের আঁকা লালনের জীবনকথা।
সারা রাতের সেই মুগ্ধতা সঙ্গে নিয়েই ভোর সাতটার বাসে রওনা দিই বাড়ির পথে। পেছনে ফেলে আসি এমন এক স্থান, যেখানে এখনও জীবন্ত আছে দর্শন, সুর আর মানবতার মেলবন্ধন।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: সাতক্ষীরা।