ল্যাবরেটরিতে হাতে-কলমে দেখি এসিড ও বেসের প্রতিক্রিয়া, ব্যবহার করি অণুবীক্ষণ যন্ত্র।
Published : 07 Aug 2025, 08:57 PM
কিছুদিন আগে অনলাইনে চার দিনব্যাপী একটি বিজ্ঞান ক্যাম্পে অনেকের সঙ্গে আমিও অংশগ্রহণ করি৷ বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) ও মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব) যৌথভাবে এই আয়োজন করে।
প্রথম ধাপে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী অনলাইনে অংশ নেয়। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হয় ৩০ জনকে, যাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ঢাকায় আরও চার দিনের ক্যাম্প। সৌভাগ্যক্রমে আমিও ছিলাম সেই নির্বাচিতদের একজন।
সব পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দিনে পৌঁছে যাই রাজধানী ঢাকায়। সেখানে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দেখা হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিশু-কিশোরদের সঙ্গে। প্রথমেই আমাদের স্বাগত জানানো হয় আমাদের।
প্রথম দিনের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি মুনির চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেবা ইসলাম সিরাজ। এরপর শুরু হয় শেখার পালা।
ল্যাবরেটরিতে হাতে-কলমে দেখি এসিড ও বেসের প্রতিক্রিয়া, ব্যবহার করি অণুবীক্ষণ যন্ত্র। পেঁয়াজের কোষ আর অতিক্ষুদ্র জীবাণু দেখতে পারা ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। এদিন বিকেলে একজন গবেষক আমাদের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নিয়ে বলেন।
দ্বিতীয় দিন শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষুদ্র জীবজগৎ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারি।
এরপর যাই উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে পৌঁছানোর পর বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিহির লাল সাহা আমাদের স্বাগত জানান। এরপর আমরা সেখানকার ল্যাবগুলো ঘুরে দেখি। দিনটা শেষ হয় একটি সেশনের মধ্য দিয়ে, যেখানে আরও নতুন তথ্য জানি জীববিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে।
তৃতীয় দিনের সবচেয়ে মজার অংশ ছিল ‘টেরারিয়াম’ বানানো। কাচের পাত্রে মাটি, কয়লা, পাথর আর ছোট গাছ দিয়ে নিজের হাতে তৈরি করি ছোট্ট একখণ্ড বাসযোগ্য পরিবেশ। এরপর তথ্যচিত্র দেখি।
দিনের শেষে আমাদেরকে চার ভাগে ভাগ করে দল করে দেওয়া হয়। প্রত্যেক দলকে দেওয়া হয় একটি করে জীববিজ্ঞানের সমস্যা, যেটা আমাদেরকে দলগতভাবে সমাধান করতে হয়।
চতুর্থ দিন শুরু হয় বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপর্ণা ইসলামের সেশনের মাধ্যমে। তিনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন বীজ থেকে চারা গজানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
এরপর স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে সেশন নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রভাষক প্রণয় চৌধুরী। মধ্যাহ্ন বিরতিতে খাবার খাওয়ার পর আমরা দলগত কাজ উপস্থাপন করি, যেখানে আগের দিন তৈরি করা জীববিজ্ঞানের সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করি।
এদিন বিকেলে আমরা রমনা পার্কে যাই। সেখানে সবুজ প্রকৃতির মাঝে আয়োজন করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে আমরা সবাই ক্যাম্পে এসে পরিচিত হওয়া নতুন দুই বন্ধুকে একটি করে চিঠি লিখি। আর নিজেকে লিখি আরেকটি চিঠি, এর বিষয় ছিল ১০ বছর পর আমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাই, কী নিয়ে থাকতে চাই।
সবশেষে আমাদের হাতে সনদ তুলে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র সনদ পাওয়া নয়, এই চারটি দিন জীবনের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর মধ্যে একটি হয়ে থাকবে। নতুন অনেক কিছু শিখেছি, দেখেছি এবং ভাবার মত প্রশ্ন মাথায় এসেছে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ময়মনসিংহ।