গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বন্ধুদের সঙ্গে সবসময় অনলাইনে যুক্ত থাকে।
Published : 23 Apr 2025, 06:11 PM
একটা সময় যখন ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া ততটা বিস্তৃত ছিল না, তখন খেলাধুলা, গল্প শোনা আর পারিবারিক সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে সময় কাটত শিশু-কিশোরদের। তবে এখনকার দৃশ্য অনেকটাই পাল্টে গেছে।
বর্তমানে দেখা যায়, স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ট্যাবলেটের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকেই দিন কেটে যায়। নতুন প্রজন্মের একটি বড় সময় কাটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও এই মাধ্যমগুলো অনেক ইতিবাচক অভিজ্ঞতার দুয়ার খুলে দিয়েছে, তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উদ্বেগও! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় আঞ্চলিক কার্যালয় ২০২৪ সালে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 'হেলথ বিহেভিয়ার ইন স্কুল-এইজড চিলড্রেন' শিরোনামের ওই গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে, যা সবাইকে চিন্তায় ফেলে দেয়।
গবেষণা বলছে, প্রতি ১০ জন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অন্তত একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় এতটাই সময় কাটায় যে তা তার দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই সমস্যাকে ‘সমস্যাজনক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার’ বলা হচ্ছে। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার না করলে অস্বস্তি বোধ করা, অন্য কাজ বাদ দিয়ে শুধু ফোনে সময় দেওয়া, এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে না রাখা।
মেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি, যেখানে ১৩ শতাংশ মেয়ে এবং ৯ শতাংশ ছেলে এই সমস্যায় আক্রান্ত।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ১৫ বছর বয়সী অনেক শিশুই বন্ধুদের সঙ্গে সবসময় অনলাইনে যুক্ত থাকে। এর ফলে অফলাইনের বাস্তব বন্ধুত্ব যেন ধীরে ধীরে ডিজিটাল চ্যাটবক্সে আটকে যাচ্ছে।
শিশুদের এই অনলাইন উপস্থিতি শুধু যোগাযোগেই সীমাবদ্ধ নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা এবং পড়াশোনায় মনোযোগের ঘাটতি।
ডিজিটাল গেইমিংয়ের ক্ষেত্রেও দৃশ্যটা খুব আলাদা নয়। প্রায় ৩৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী প্রতিদিন গেইম খেলে এবং তাদের মধ্যে ২২ শতাংশ দিনে অন্তত চার ঘণ্টা সময় গেমিংয়ে ব্যয় করে। এতে শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, তৈরি হচ্ছে মানসিক বিপর্যয়ও। ছেলেরা এই সমস্যায় বেশি ভোগে। ছেলেদের মধ্যে এই হার ১৬ শতাংশ, যেখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি মাত্র ৭ শতাংশ।
ওই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তবে অনেক কিশোর-কিশোরী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে সঠিকভাবে। তারা বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন পাচ্ছে এবং নিজেদের আগ্রহ ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা শুরু হয় যখন ভার্চুয়াল দুনিয়া বাস্তব জীবনকে গ্রাস করতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন সচেতন পদক্ষেপ। ডিজিটাল শিক্ষা, প্রযুক্তি ব্যবহারে সময়সীমা নির্ধারণ, এবং পরিবারে খোলামেলা আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরামর্শ তাদের।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।