বয়সে শিশু-কিশোর হলেও কাজের চাপ সামলাতে হয় বড়দের মতই।
Published : 07 Sep 2025, 11:36 PM
দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ কাজ শিশুর জন্য নিষিদ্ধ হলেও জীবিকার তাগিদে অনেককেই এসব কাজে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
বয়সে শিশু-কিশোর হলেও কাজের চাপ সামলাতে হয় বড়দের মতই। তাদের কেউ কেউ যানবাহনে চালকের সহকারী, কেউ হোটেলে বাবুর্চির সহযোগী, কেউ রিকশা চালকসহ নানা ধরনের কাজ করে।
এই শিশুদের অনেককেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়েই কাজ করতে হয়। ক্লান্তি এলেও মেলে না বিশ্রামের সুযোগ। অনেকের নেই সাপ্তাহিক ছুটির সুযোগ। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন শ্রমজীবী শিশুর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় ১৩ বছর বয়সী ইমরানের সঙ্গে। সে লেগুনা চাককের সহকারী হিসেবে কাজ করে। সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে।
ময়মনসিংহ থেকে পরিবারের সঙ্গে তিন মাস আগে ঢাকায় এসেছে সে, এখন থাকে মোহাম্মদপুরে।
ইমরান হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “প্রথম প্রথম মাথাব্যথা আর শরীর খারাপ লাগত। এখন তেমন হয় না।"
এছাড়া অসুস্থ হলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া বা কোনো রকম ওষুধ খাওয়ার সুযোগ হয় না বলেও জানায় সে।
ধানমন্ডির একটি আবাসিক ছাত্রাবাসে বাবুর্চির কাজে যুক্ত ১৫ বছরের সিরাজ। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আড়াই মাস আগে রংপুর থেকে ঢাকা এসেছে সে। সারাদিনের তিনবেলা রান্নার দায়িত্ব তার কাঁধে। রান্নার সময় তাকে চুলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
সিরাজ হ্যালোকে বলে, “তিনবেলা রান্নার জন্য সারাদিন চুলার পাশে থাকতে হয়। কাজ শেষে খুব ক্লান্ত লাগে। রাতে সারা গায়ে ব্যথা হয়।"
ইমরান আর সিরাজের মতই হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হয় ১২ বছরের ইসরাফিলকে। সে মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালায়।
সে হ্যালোকে জানায়, রোজ তাকে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা রিকশা চালাতে হয়। সারাদিন প্যাডেল চালাতে গিয়ে ভরটা পায়ের ওপর পড়ে, তাই ক্লান্তি আরও বেড়ে যায়।
"প্রতিদিন ১০-১২ ঘণ্টা রিকশা চালাই। রাতে মাথা ঘোরে, গায়ে ব্যথা করে। রিকশা চালানো শুরু করার পর স্কুল ছেড়ে দিয়েছি।”
বাংলাদেশ শ্রম আইন বলছে, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে ১২ বছর পূর্ণ হলে শর্তসাপেক্ষে হালকা ও নিরাপদ কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে, তবে শর্ত হল কাজ যেন তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি না করে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশে মোট ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে।
শিশুদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করার প্রভাব নিয়ে চিকিৎসক রাজর্ষি চাকমার সঙ্গে কথা হয়।
হ্যালোকে এই চিকিৎসক বলেন, “শিশুরা যখন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ভারি বা কঠিন কাজ করে, তখন পিঠে ব্যথা, হাড়ের সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তারা অপুষ্টিতে ভোগে, মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“দূষিত পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুস ও চোখে সমস্যা হয়, ক্যান্সারের মত রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। অনেকে অবসাদে ভোগে।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।