‘সমাজের মানুষ যখন সচেতন হয় ও পড়ালেখা করে তখন তারা বাল্যবিয়ের কুফল বুঝতে পারে এবং বাল্যবিয়ে থেকে ফিরে আসে। এখন বাল্যবিয়ের বিষয়ে আইনের খুব কড়াকড়ি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন যখনই কোনো বাল্যবিয়ের খবর পায়, সেখানেই তারা চলে যাচ্ছে। এভাবেই বাল্যবিয়ে কমে আসছে।’
Published : 23 Apr 2024, 04:26 PM
বাল্যবিয়ে বন্ধে জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। তার ভাষ্য, এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর বা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বেশি ভূমিকা রাখতে পারে, যেহেতু তারা জনগণের সঙ্গে সরাসরি ও সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারের নানা উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেছেন এই সংসদ সদস্য।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
হাবিবুর রহমান হাবিব: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সংসদে আইন পাশ করেছে। এবং সরকার সব সময় কাজ করে যাচ্ছে যেন বাল্যবিবাহ না হয়। সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে দূর করার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের সিলেট অঞ্চলে বাল্যবিয়ের হার কমে গেছে।
সমাজের মানুষ যখন সচেতন হয় ও পড়ালেখা করে তখন তারা বাল্যবিয়ের কুফল বুঝতে পারে এবং বাল্যবিয়ে থেকে ফিরে আসে। এখন বাল্যবিয়ের বিষয়ে আইনের খুব কড়াকড়ি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন যখনই কোনো বাল্যবিয়ের খবর পায়, সেখানেই তারা চলে যাচ্ছে। এভাবেই বাল্যবিয়ে কমে আসছে।
আমরা বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করছি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, আমরা আমাদের সমাজ থেকে বাল্যবিয়ে দূর করতে পারব।
হ্যালো: দেশে অর্ধেকের বেশি মেয়ের বাল্যবিয়ে হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি চলতি বছরের ৪ মার্চ সংসদে এই তথ্য দিয়েছেন। আপনার কাছে জানতে চাই,এত পদক্ষেপের পরও কেন বাল্যবিয়ে কমছে না?
হাবিবুর রহমান হাবিব: এটা নিয়ে আমার কিছুটা দ্বিমত আছে। তা হলো অনেক ক্ষেত্রেই সমাজে কন্যা যখন উপযুক্ত হয় তখনই বিয়ে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, মেয়ের বয়স আঠারো হয়েছে কিন্তু দেখে মনে হয় যে, আঠারো হয়নি। সেটাকেও অনেকে বাল্যবিয়ে মনে করেন।
যেহেতু আমাদের সংসদে আইন হয়েছে, ১৮ বছরের নিচে কোনো বিবাহ হবে না আইনগতভাবে। আমি মনে করি, এটা অনেকাংশে কমে গেছে। আমরা মনে করি, আমরা যেভাবে জনসচেতনতা তৈরি করছি আস্তে আস্তে বাল্যবিয়ে পুরোপুরি কমে যাবে।
হ্যালো: জনগণের সঙ্গে যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের সরাসরি একটা সংযোগ থাকে। তাই, সমাজের এই ব্যাধি নির্মূলে জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব থাকে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে একজন জনপ্রতিনিধির কী কী দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে আপনি মনে করেন ?
হাবিবুর রহমান হাবিব: আমি আমার বক্তব্যে সব সময় বলি, আমাদের যারা বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার, চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, পৌরসভার কাউন্সিলর রয়েছেন তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক অনেক বেশি। যখনই একজন মানুষ বিপদে পড়ে, তখনই সে কিন্তু একজন মেম্বারের কাছে বা কাউন্সিলরের কাছে চলে আসে। আমাদের উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা বিভিন্ন সেমিনার করেন বা আমরা করি। আমরা সব সময় জনসচেতনতা তৈরির চেষ্টা করি।
আমরা স্কুলগুলোতে কাউন্সেলিং করি। আমরা স্কুলের অনুষ্ঠানে যখন যাই তখন আমরা মা-বাবাদের বুঝাই যে, আপনাদের মেয়ে বা ছেলে লেখাপড়া করে স্বাবলম্বী হওয়ার পরে যখন সে বুঝতে পারবে সমাজ ও পরিবার সম্পর্কে তার জাতি সম্পর্কে তখন যদি তাকে বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সেটি ভালো হবে।
আমরা এভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, আমরা জনপ্রতিনিধি,প্রশাসন সকলে মিলে আমাদের এই দেশেকে বাল্যবিবাহ মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: সিলেট।