ছেলেদের শেখাতে হবে তারা তখনই প্রকৃত পুরুষ হবে, যখন তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।
Published : 08 Mar 2025, 07:55 PM
নারীর কর্মপ্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানোর মাধ্যমে সমাজে নারীদের নেতৃত্ব বিকাশের পথ আরও সুগম হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বাংলা ভাষা বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক শারমিন সুলতানা তন্বী। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি ও গবেষণা করেন।
হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় নারী শিক্ষা ও এর বাস্তব প্রয়োগ এবং নারীদের কর্মসংস্থান ও নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
হ্যালো: শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রীদের কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয় বলে আপনি মনে করেন?
শারমিন সুলতানা তন্বী: আমি গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পড়াচ্ছি। আমার পর্যবেক্ষণ থেকে বলতে পারি, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল মানসিকতা। অনেক পরিবার শুধুমাত্র মেয়েদের একটি ডিগ্রি অর্জনের জন্য পড়াশোনার সুযোগ দেয় কিন্তু তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না। ফলে মেয়েরা পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আবার অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেও কী শেখা হচ্ছে এবং তা ভবিষ্যতে কীভাবে কাজে লাগবে সে বিষয়ে সচেতন থাকে না। ফলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য থেকে তারা দূরে সরে যায়।
হ্যালো: বাংলাদেশে নারীদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ানোর জন্য কী করা প্রয়োজন?
শারমিন সুলতানা তন্বী: অনেক সময় আমরা চিন্তা করি কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করলে বেশি গুরুত্ব পাব। কিন্তু নারীদের বোঝাতে হবে, যে বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে সেটিতে শ্রম দিলেও সফল হওয়া সম্ভব। পাশাপাশি পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করার দায়িত্ব নারীদেরও নিতে হবে। তাহলেই তারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হবে।
হ্যালো: শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে?
শারমিন সুলতানা তন্বী: নারীদের বোঝাতে হবে, তারা অনেক কিছু করতে সক্ষম। কর্মক্ষেত্রে নারীর উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই নারী তার জায়গা থেকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
হ্যালো: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শিক্ষিত নারীরা কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয় বলে আপনি দেখেছেন?
শারমিন সুলতানা তন্বী: নারী শিক্ষার হার বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়। অনেক নারী মাতৃত্বের সময় কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কারণ পরিবার বা সমাজ থেকে তারা ইতিবাচক সমর্থন পায় না। তাই কর্মক্ষেত্রে ডে কেয়ার সুবিধা থাকা জরুরি। অনেক সময় কর্মজীবী নারীরা বাড়ির কাজের চাপে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, কারণ এক্ষেত্রে পুরুষদের ভূমিকা খুবই কম। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নারীদের দক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় এবং তাদের সম্মানী পুরুষদের তুলনায় কম রাখা হয়, যা বড় প্রতিবন্ধকতা।
হ্যালো: নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে কী করা যেতে পারে?
শারমিন সুলতানা তন্বী: এ সমস্যার সমাধান হল ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। আইন প্রয়োগ বা নারীদের পোশাকে সীমাবদ্ধ রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ছেলেদের শেখাতে হবে তারা তখনই প্রকৃত পুরুষ হবে, যখন তারা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হলে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। তাহলেই আমরা একটি সুন্দর সমাজ গড়তে পারব।
হ্যালো: অসংখ্য ধন্যবাদ, ম্যাম। ভালো থাকবেন।
শারমিন সুলতানা তন্বী: ভালো থাক, সুস্থ থাক, সুন্দর থাক।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।