'খুব ছোটবেলা থেকেই দাবা খেলতে শুরু করি। তখন বয়স ছিল মাত্র ছয়।'
Published : 25 Mar 2025, 07:16 PM
মাত্র ১৪ বছর বয়সে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় নারায়ণগঞ্জের মনন রেজা নীড়। স্বপ্ন দেখলে তা যে মানুষকে আরও দূর নিয়ে যায়, তার প্রমাণ পেয়েছে সে। দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মনন এখন দেশের সবচেয়ে কম বয়সী আন্তর্জাতিক মাস্টার। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় সে বলেছে দাবা খেলার শুরুর গল্প, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
হ্যালো: প্রথমেই জানতে চাই, দাবার প্রতি কেন তোমার আগ্রহ তৈরি হল?
মনন: খুব ছোটবেলা থেকেই দাবা খেলতে শুরু করি। তখন বয়স ছিল মাত্র ছয়। আমার বাবা দাবা খেলতেন। তার খেলা দেখেই প্রথম আগ্রহ জন্মায়। তিনিই আমাকে দাবার প্রাথমিক চাল শেখান। পরে একটি দাবা একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখান থেকেই নিয়মিত খেলা শুরু করি।
হ্যালো: গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোর্শেদের রেকর্ড ভেঙে দেশের সর্বকনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার অনুভূতিটা কেমন ছিল?
মনন: এটা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। আমি কখনো ভাবিনি এত দ্রুত এই স্বীকৃতি পাব। তবে থাইল্যান্ডের এক প্রতিযোগিতায় ভালো খেলার পর আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় যে আমি পারব। এরপর জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে একটি আইএম নর্ম পাই, হাঙ্গেরিতে আরেকটি অর্জন করি। আন্তর্জাতিক মাস্টার হতে তিনটি নর্ম লাগে এবং ২ হাজার ৪০০ রেটিং দরকার হয়। ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমার আইডল নরওয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেন।
হ্যালো: এই প্রতিযোগিতায় কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে?
মনন: প্রথম দিকে ভালো করছিলাম না। চার ম্যাচ শেষে আমার মাত্র আড়াই পয়েন্ট ছিল। প্রথম ম্যাচেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল এক খেলোয়াড়ের কাছে হেরে যাই। তখন মনে হয়েছিল আর হয়ত পারব না। কিন্তু, মা পাশে ছিলেন। তিনি উৎসাহ দিয়ে বলছিলেন, তুমি পারবে। তখন ঠিক করলাম হাল ছাড়ব না। শেষ ম্যাচটি আমাকে ড্র করতেই হত, যা খেলেছি প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে। অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হয়ে খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে মা-বাবার সমর্থন সবসময়ই ছিল।
হ্যালো: দাবা নিয়ে তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
মনন: আমার প্রধান লক্ষ্য গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। তবে এটি অর্জন করতে হলে বিদেশি খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, যা শুধু দেশে থেকে সম্ভব নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন যেখানে স্পনসরশিপ বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও আমি বিশ্বাস করি যদি সঠিক সমর্থন পাই তাহলে একদিন গ্র্যান্ডমাস্টার হব।
হ্যালো: আমাদের দেশে দাবাড়ুদের জন্য কতটা অনুকূল পরিবেশ রয়েছে?
মনন: খুবই প্রতিকূল। প্রথমত, দাবা জনপ্রিয় নয় তাই সাধারণ মানুষ একে গুরুত্ব দেয় না। স্পনসর পাওয়া কঠিন। ভালো ভেন্যু, পর্যাপ্ত প্রতিযোগিতা ও দর্শকের আগ্রহ—এসবের অভাব আমাদের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েও সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি, যা সত্যিই হতাশাজনক।
হ্যালো: দাবার জনপ্রিয়তা বাড়াতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করো তুমি?
মনন: খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করতে হবে। গ্র্যান্ডমাস্টার বা আন্তর্জাতিক মাস্টারদের মাসিক ভাতা দেওয়া উচিত, যাতে তারা আর্থিক চিন্তা ছাড়াই দাবায় মনোযোগ দিতে পারেন। এ ছাড়া স্কুল-কলেজে দাবার প্রচলন বাড়ালে এর জনপ্রিয়তা বাড়বে।
হ্যালো: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।
মনন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।