'আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু সঠিক ভাবে এই বিষয়টার উপর গবেষণা হওয়া দরকার।'
Published : 20 May 2024, 05:49 PM
বাল্যবিয়ের কারণে শুধু মা নয়, সন্তানের উপরেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হাবিবুর রহমান সজিব। বাল্যবিয়ে বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ দেন তিনি।
হ্যালো: যে সব কিশোরী ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কী করা যেতে পারে?
হাবিবুর রহমান সজিব: আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কিন্তু সঠিক ভাবে এই বিষয়টার উপর গবেষণা হওয়া দরকার। আগে আমাদের দেশে বাল্যবিয়ের হার অনেক বেশি ছিল। বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় বিগত দশ বছরে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমে এসেছে। তা সত্ত্বেও সেই হার যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে তা কিন্তু নয়।
বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে এমন মায়েদের ব্যাপারে আমাদের গবেষণা বাড়াতে হবে। বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েরা কী ধরনের ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদেরকে মানসিক সমস্যা থেকে বের করে আনার জন্য সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু শারীরিক অসুখ না, তাদের মানসিক সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
হ্যালো: একজন মনোবিদ হিসেবে সমাজের জন্য আপনি কী বার্তা দিতে চান?
হাবিবুর রহমান সজিব: দেখুন আমরা যদি বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে ভাবি তাহলে এটাকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম বিষয়টি হলো শারীরিক জটিলতা। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সে যে সব মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তাদের সন্তান প্রসবোত্তর মৃত্যুর হার প্রায় প্রাপ্ত বয়স্ক মায়েদের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণ। শুধু তাই নয়, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মায়েরা যখন সন্তান জন্ম দিচ্ছে তখন তাদের সন্তানরাও কিন্তু নানা ডিসঅ্যাবিলিটি নিয়ে জন্ম নেয়, যেমন সেরিব্রাল পালসি, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার ও এডিএইচডি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় বিষয়টা হলো বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েরা বিষণ্নতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক জটিলতায় ভোগার শঙ্কা থাকে।
তৃতীয় বিষয় হলো, বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের পক্ষে সঠিক ভাবে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করা কঠিন হয়ে ওঠে। পারিবারিক কলহ সৃষ্টিসহ সামাজিক বিভিন্ন অপরাধ বেড়ে যেতে পারে।
চতুর্থ বিষয় হলো, বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। এতে করে দেশের মেধা ও মানব সম্পদের অপচয় হচ্ছে।
একজন মনোবিদ হিসেবে সমাজের প্রতি আমার পরামর্শ হলো, বাল্যবিয়ে অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের দেশের সরকারের যে আইন রয়েছে ১৮ বছরের আগে মেয়েদের অবশ্যই বিয়ে নয়, তা অবশ্যই সকলকে মেনে চলতে হবে।
বাল্যবিয়ে বন্ধে সমাজের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। বাল্যবিয়ের কুফলগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বাগেরহাট।