বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়াতে পটুয়াখালীর গলাচিপায় জুমার খুতবায় বাল্যবিয়ের কুফল তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন।
Published : 25 Jun 2024, 02:11 PM
হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল এ তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়াও বাল্যবিয়ে রোধের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেন।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রশাসন নিয়মিত কোন ধরনের কাজ করছে?
মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল: বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইন-২০১৭ অনুসারে জন অবহিতকরণের জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এ লক্ষ্যে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এছাড়াও যে কোনো ধরনের সমাবেশে ও জন অবহিতকরণে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আমি এবং উপজেলা প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তাগণ রয়েছে তারা সকলে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।
এছাড়া যেহেতু ধর্মের অজুহাত দিয়ে অনেক সময় বাল্যবিয়ে সংঘটিত হয় তাই আমরা জুমার নামাজের আলোচনায় বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে আলোচনার উদ্যোগও নিয়েছি।
আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গলাচিপা স্কিল ল্যাবের অধীনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে আমরা শিশু-কিশোরদের বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সতর্ক করি। আমরা তাদের বোঝাতে চেষ্টা করি যে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে একটি বাধা হলো বাল্যবিয়ে। আমাদের সার্বক্ষণিক হটলাইন চালু রয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী যদি বাল্যবিয়ের শিকার হয় তাহলে তার সহপাঠী আমাদেরকে জানাতে পারবে।
আমরা এখন এটা বলতে পারি, বাল্যবিয়ে বন্ধে আমাদের উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এখন এই বিষয়ে সচেতন যে, বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে কোন অধিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
হ্যালো: ঠিক কী কী কারণে বাল্যবিয়ে বেশি হয় বলে আপনি মনে করেন?
মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল: প্রথম কারণ হলো আর্থিক অনটন ও শিক্ষার অভাব। কারণ ধর্মের অজুহাত দিয়ে কোনো সচ্ছল ধার্মিক পরিবারে বাল্যবিয়ে হয় না। নিম্ন আয়ের মানুষেরা তাদের মেয়েদেরকে দায় বা বোঝা হিসেবে মনে করেন। এই জন্য তাদের মাঝে মেয়েদেরকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
শিক্ষার ব্যাপারে যারা সচেতন নয় ও যে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসে না এবং যার ফলাফল খারাপ; আমরা দেখেছি আমাদের পর্যবেক্ষণে তারাই আসলে বাল্যবিয়ের কবলে পড়ছে।
আর ধর্মীয় একটা বিষয় আছেই যে, তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়া আবশ্যক। আমি বলব এটি কম্পাউন্ডিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে, মূল ফ্যাক্টর নয়। আর শিক্ষার্থীর অনেক ক্ষেত্রে মনোবলের একটা ব্যাপার রয়েছে, তার যদি প্রচণ্ড মনোবল থাকে তাহলে বাল্যবিয়ে হওয়া কঠিন হয়ে যায়।
আমরা যেসব বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি, সেখানে দেখেছি শিক্ষার্থী নিজে অথবা তার সহপাঠীকে দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের পেছনে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে আপনি কীভাবে দেখেন?
মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল: সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে বাল্যবিয়ের পেছনের একটি অনুষঙ্গ হিসেবে অবশ্যই দায়ী করা যায়। আমরা দেখেছি, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কোনো নিম্ন আয়ের মানুষের মেয়ে যদি দেখতে সুন্দর হয় সে ক্ষেত্রে তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। আর এই নিরাপত্তার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটে।
হ্যালো: আপনার উপজেলায় বাল্যবিয়ের পরিমাণ কেমন? এই পর্যন্ত কতগুলো বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন? বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া কেমন দেখতে পান?
মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল: এ পর্যন্ত আমরা ৫২টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। এরমধ্যে কিছু বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি হওয়ার আগেই, হয়ত তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময়। কিছু বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি বিয়ের অনুষ্ঠান হবে এমন আর কিছু বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে গেছে এমন।
এক্ষেত্রে আমরা মেয়ে এবং ছেলের সংসার করা প্রতিরোধ করেছি। আমরা ‘সাহসিকা’ নামক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। যার আওতায় সুশীলন এবং ব্র্যাক আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। আমরা একটি ডেটাবেজ তৈরি করছি, যার মাধ্যমে আমরা বাল্যবিয়ে হয়েছে এমন সকল শিক্ষার্থী তাদের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, স্কুলের শিক্ষকের নম্বর এবং কী কারণে বাল্যবিয়ে হয়েছিল এমন তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছি। চেষ্টা করছি বাল্যবিয়ের ফলে সে যে হুমকির মুখে ছিল তা পেরিয়ে যাতে তারা পড়াশোনা শেষ করতে পারে।
হ্যালো: ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে এমন কিশোরীরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হতে পারে?
মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল: বাল্যবিয়ে হয়ে গিয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের আমরা ট্র্যাকিং করছি। তাদের স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছি তারা যাতে বাল্যবিয়ের শিকার কিশোর-কিশোরীদের উপর বিশেষ নজর রাখে।
তাদেরকে আমরা বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিশেষ করে যারা বাল্যবিয়ের শিকার তারা নিতান্তই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। তাই তাদের স্কুল ব্যাগ ও শিক্ষা সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: পটুয়াখালী।