‘বাল্যবিয়ের ব্যাপারে সরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্টার কোনো ভাবেই সহযোগিতা করেন না বা করেননি। কখনোই করেন নাই এখনো করেনি।’
Published : 15 May 2024, 05:23 PM
কাজীরা কোনো ভাবেই বাল্যবিয়ের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার ১নং ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নের মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধক মো. আমীর হোসেন। তার ভাষ্য, আইনে যেহেতু বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ তাই কাজীরা কোনো ভাবে এই বিয়ে রেজিস্টার করতে পারেন না। অভিভাবক স্থান পরিবর্তন করে গোপনে সন্তানদের বাল্যবিয়ে দেন। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে বাল্যবিয়ে বন্ধে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
হ্যালো: আপনার কাছে বাল্যবিয়ে পড়ানোর অনুরোধ এলে আপনি কী করেন?
মো. আমীর হোসেন: শহরের চাইতে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ বেশি অসচেতন ও অবহেলিত। তাই মাঝেমধ্যে বাল্যবিয়ে পড়ানোর অনুরোধ আসে। তখন আমরা ছেলে ও মেয়ের অভিভাবকদের বোঝাই যে বাল্যবিয়ে আইনত অপরাধ। কেউ যদি বাল্যবিয়ে সংঘটিত করে তাহলে আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে।
শুধু তাই নয়, যদি বাল্যবিয়ে হয়েও যায় তাহলে এর অনেক ক্ষতি আছে। অল্প বয়সে বিয়ের ফলে মেয়েরা স্বাস্থ্যহীনতা ও পুষ্টিহীনতায় ভুগতে পারে। এই সময়ে যদি সন্তানের জন্ম হয় তাহলে সে মেয়েটি পরিবার সামলাবে নাকি সন্তান ও নিজেকে সামলাবে? তার নিজের শরীরের যত্নই সঠিকভাবে সে নিতে পারবে না। বাল্যবিবাহ একটি সংক্রামক রোগ। সুতরাং, এই বিয়ে থেকে আমাদের সকলকে বেঁচে থাকতে হবে।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে করানোর জন্য আপনাদের উপর কোনো চাপ আসে?
মো. আমীর হোসেন: সাধারণত বাল্যবিয়ে যেহেতু সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ সেই সুবাদে আমার কাছে এরকম কোনো চাপ আসে না। বাল্যবিয়ে পড়ানোর জন্য চাপ তারাই দিতে পারে যারা সমাজে নেতৃত্ব পর্যায়ে আছে। তবে আমার ইউনিয়নে এরকম কোনো চাপ নেই। আমি মনে করি, আমার বকশিগঞ্জ উপজেলাতেও বাল্যবিয়ের জন্য কাজীরা কোনো চাপের শিকার হয় না।
হ্যালো: আপনার মতে বাল্যবিয়ে বন্ধ হওয়া উচিত কিনা, আপনি কী মনে করেন?
মো. আমীর হোসেন: আমি প্রথম প্রশ্নের উত্তরেই বলেছি, বাল্যবিয়ে একটি সংক্রামক ব্যাধি। বাল্যবিয়ের সঙ্গে কোনো ভাবেই জড়িত থাকা যাবে না। এটি আইনগত ভাবে নিষিদ্ধ।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের জন্য অনেক সময় কাজীদেরকেও দায়ী করা হয়। বলা হয় বাল্যবিয়েতে কাজীরা গোপনে সহযোগিতা করে থাকেন। এই বিষয়ে আপনি কিছু বলতে চান?
মো. আমীর হোসেন: বাল্যবিয়ের ব্যাপারে সরকারি ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্টার কোনো ভাবেই সহযোগিতা করেন না বা করেননি। কখনোই করেন নাই এখনো করেনি। কিন্তু অনেক সময় দেখা এলাকায় একটা বিবাহ হয় আমরাই জানি না। পরে খবর নিয়ে দেখা যায়, বিয়েটি সংঘটিত হয়েছে পাশ্ববর্তী ইউনিয়নে। মাঝেমাঝে এমন খবর আমাদের কানে আসে। কিন্তু একজন নিকাহ রেজিষ্টার বাল্যবিয়েতে সহযোগিতা করতে পারেন না। আইনগত ভাবেও যেহেতু নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তিত্ববোধ থেকেও তিনি এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন না।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে আপনারা কী কী পদক্ষেপ নেন?
মো. আমীর হোসেন: বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের মাসিক সমন্বয় মিটিং হয় বকশিগঞ্জে। মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে আমাদের জেলা প্রশাসকের ডাকে আমরা সাড়া দিয়ে উপস্থিত হই। সেখানে আমরা বাল্যবিয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
তাছাড়া বিয়ে পড়ানোর সময় আমাদের ডাক পড়ে। আমরা কিন্তু আগে জানতে পারি না, এটি বাল্যবিয়ে কিনা। উপস্থিত হয়ে যদি দেখি এটি বাল্যবিয়ে তাহলে তাহলে আমরা চলে আসি।
বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সচেতনতার প্রয়োজন আছে। অসচেতনতার কারণেও অনেক বাল্যবিয়ে ঘটে। কিন্তু কাজীরা উপস্থিত হওয়ার পর সেই বিয়ে আর সংঘটিত হতে পারে না।
আমি মনে করি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার নেতৃস্থানীয় সকলের সার্বিক সহযোগিতা দরকার।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: জামালপুর।