‘বিয়ের অনলাইন নিবন্ধনের ওয়েবসাইটটির নকশা এমন ভাবে করতে হবে যাতে বিয়ের নিবন্ধন করতে বয়স ও প্রয়োজনীয় তথ্য জন্ম নিবন্ধন ফর্ম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে।’
Published : 31 Mar 2024, 04:31 PM
বিয়ের অনলাইন নিবন্ধন চালু করা গেলে, বাল্যবিয়ে কমানো যাবে বলে মনে করেন ভোলা সদরের ৭নং শিবপুর ইউনিয়নের কাজী মহিবুল্লাহ আজাদ।
কাজীদের সরকারি বেতনের আওতায় আনলে বাল্যবিয়ে বন্ধে তাদের দায়বদ্ধতা তৈরি হবে বলেও জানান তিনি। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় বাল্যবিয়ে বন্ধে নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে করানোর কোনো অনুরোধ এলে কী করেন?
মহিবুল্লাহ আজাদ: বাল্যবিয়ের জন্য কোনো অনুরোধ এলে প্রথমে আমরা তাদেরকে কাউন্সেলিং করে বোঝানোর চেষ্টা করি যে, বাল্যবিবাহ রাষ্ট্রীয় আইনে নাই। বাল্যবিয়ে হলে তারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে করানোর জন্য আপনার উপর কোনো চাপ আসে?
মহিবুল্লাহ আজাদ: বাল্যবিয়ের জন্য সেভাবে কোনো চাপ আসে না। কারও চাপে আমরা বাল্যবিয়ে পড়িয়েছি আসলে বিষয়টা এরকম না।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে নিয়ে আপনার পরামর্শ কী, বাল্যবিয়ে হওয়া উচিত কিনা?
মহিবুল্লাহ আজাদ: বাল্যবিয়ে তো হওয়া উচিত না। রাষ্ট্র বিবাহের জন্য যে বয়সটা নির্ধারণ করে দেয় ওই বয়সটাই নির্দিষ্ট। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের উপরে হতে হবে। ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়ের বিয়ে হলে সেটা বাল্যবিয়ে হিসেবে নির্ধারিত হয়। রাষ্ট্রের যেহেতু আইন ১৮ বছরে বিয়ে দেওয়া সে ক্ষেত্রে এটা তো হওয়া উচিত না এবং এটা করা যাবেই না।
আমার পরামর্শ হচ্ছে বিয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু করা। বিয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের ওয়েবসাইটটির নকশা এমন ভাবে করতে হবে যাতে বিয়ের নিবন্ধন করতে বয়স ও প্রয়োজনীয় তথ্য জন্ম নিবন্ধন ফর্ম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। তাহলে দেখা যাবে, নিকাহ রেজিস্টার যখন বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে যাবেন তখন জন্ম নিবন্ধনের বয়সটাই গণ্য হবে। জন্ম নিবন্ধনে বয়স যদি ১৮ এর কম হয় তাহলে বিয়ে নিবন্ধিত হবে না। সেখানে কোনো কারচুপির সুযোগ থাকবে না।
আমরা ম্যানুয়ালি বিবাহ যে খাতায় রেজিস্টার করি,এই রেজিস্টার করার পর অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম চালু করতে হবে। যদি অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম চালু করা হয়,তাহলে কোনো কাজী বাল্যবিয়ে নিবন্ধন করতে পারবে না। আমার পরামর্শ হচ্ছে বাল্যবিয়ে যাতে না হয় তার জন্য প্রতিটা বিবাহ অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের জন্য অনেক সময় কাজীদেরকেও দায়ী করা হয়। বলা হয় বাল্যবিয়েতে গোপনে কাজীরা সহযোগিতা করে থাকেন। এই বিষয়ে আপনি কিছু বলতে চান?
মহিবুল্লাহ আজাদ: বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে কাজীদের দায়ী করা হয়। তবে কথাটা একেবারে অমূলক নয়, আবার সঠিকও নয়। সঠিক নয় এই জন্য যে, একটা বিয়ের ক্ষেত্রে কার সঙ্গে কার বিয়ে হবে,দেন দরবার,বিয়ের তারিখ নির্ধারণ, বিয়ের ডেকোরেশন, কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা এই সব কিছুই অভিভাবকেরা আগে ঠিক করে নেন। তারা সব ঠিক করে প্রান্তিক লগ্নে কাজীকে ডাকে। সব শেষেই কিন্তু কাজীর ব্যাপার আসে।
সেক্ষেত্রে প্রথম হচ্ছে অভিভাবকের ভূমিকা। এরপর আসে সামাজিক সচেতনতা এবং এটির সঙ্গে যারা জড়িত ঘটক বা যারা ছেলে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করে বা ঘটকালি করে তারা। অভিভাবক যদি না চায়, যদি বলে আমার মেয়েকে আমি বাল্যবিয়ে দেব না, তাকে বিয়ে দেওয়ার বয়স হয়নি,তখন ঘটক কাজী তো দূরের কথা; কারোই সাধ্য নেই যে বাল্যবিয়ে পড়াবে বা রেজিস্ট্রেশন করবে।
রেজিস্ট্রেশন তো হচ্ছে বহু পরের কথা। এনগেজমেন্ট হয়,দেখা দেখি করে এগুলো তো আসলে কাজী জানেও না। শুধুমাত্র বিয়ের ক্ষেত্রে কাজীর দায় থাকতে পারে। কিন্তু বিবাহ সংঘটিত তো বিভিন্ন ভাবেই হতে পারে। মৌখিক বিবাহ হতে পারে,ইমাম বা কোনো হুজুর দিয়ে মৌখিক বিয়ে পড়িয়ে ফেলতে পারে। সব আয়োজন শেষে কাজী গিয়ে যদি বিয়েটা নাও রেজিস্ট্রেশন করে সেক্ষেত্রে কিন্তু পারিবারিকভাবে মেয়ে পক্ষ ছেলে পক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু করে ফেলে। তখন শুধু রেজিস্ট্রেশনটা বাকি থাকে। সেক্ষেত্রে কাজীর ভূমিকার চাইতে অভিভাবকদের ভূমিকা এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
মহিবুল্লাহ আজাদ: বাল্যবিয়ে বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলতে বিবাহ রেজিস্টার যারা আছে- কাজী তাদেরকে কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বেতন দেওয়া হয় না। আমার মনে হয়,এই মাসে মনে করেন যে একটাও বিবাহ নাই কাজী তার ঘর ভাড়া, অফিস বিল, নিজের খরচ ও বিভিন্ন খরচের কারণে দুই একটা কম বয়স হলেও বিয়ে পড়াতে চায়।
এক্ষেত্রে পরামর্শ হচ্ছে নিকাহ রেজিস্টারদের বেতনের আওতায় নিয়ে আসা। বিয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু করা, প্রতিটা বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার আগেই তাদের জন্ম নিবন্ধন কার্ড এবং আইডি কার্ড যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা। ছেলে অথবা মেয়ে যেকোনো একজনের ইউনিয়নে বিবাহ রেজিস্টার করা, হয় ছেলের এলাকায় কাবিনটা রেজিস্ট্রেশন হবে আর না হয় মেয়ের এলাকায় কাবিনটা রেজিস্ট্রেশন হবে।
মনে করেন ছেলেও ওই এলাকার না,মেয়েও ওই এলাকার না। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করল অন্য এক এলাকায়,তাহলে কিন্তু কারও দায়ভার থাকে না। ছেলে যদি আমার এলাকার হয় বা মেয়ে যদি আমার এলাকার হয়,তাহলে কিন্তু আমার দায়ভারটা থাকে। ছেলের এলাকায় হোক অথবা মেয়ের এলাকায় হোক যেকোনো এলাকায় বিয়ের রেজিস্ট্রেশনটা করতে হবে।
রেজিস্টারদের অফিস টাইম নির্ধারণ করে সব বিবাহ অফিস টাইমে শেষ করা, যেমন আমাদের কোনো সময় রাত ১২টা, ১টা-২টা-৩টার দিকেও বিয়ে পড়ানোর জন্য কল করে। এই বিষয়টা বন্ধ করে বিবাহটা অফিসমুখী করতে হবে। বিয়ে হোক বা না হোক কাজীর নির্দিষ্ট একটা বেতন থাকবে। তখন সে বাল্যবিয়ে করানোর আগে ভাববে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ভোলা।