'অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার ফলে যেমন শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিয়ের পর মেয়ে শিশুদের বিষণ্ণতার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।'
Published : 16 May 2024, 01:22 PM
বাল্যবিয়ে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে জটিল ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হাবিবুর রহমান সজিব। তার ভাষ্য, একটি শিশু কারো স্ত্রী হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। শিশুরা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে এসব বিষয়ে বুঝতে শেখে। কিন্তু বাল্যবিয়ের ফলে অনেক কিছু অজানা থাকতেই শ্বশুরবাড়িতে যেতে হয় তাকে। ফলে অনেক পরিস্থিতিই সে সামাল দিতে পারে না। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে বাল্যবিয়ের মানসিক ক্ষতি নিয়ে কথা বলেন এই চিকিৎসক।
হ্যালো: মাধ্যমিক স্কুলে ওঠার পর অনেক মেয়ে শিশুকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। বিয়ের প্রস্তাব আনা হয় আবার কখনো বিয়েও দিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের ঘটনা কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলে?
হাবিবুর রহমান সজিব: সম্প্রতি কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশে কন্যা শিশুদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি।
অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়ার ফলে যেমন শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেও এর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিয়ের পর মেয়ে শিশুদের বিষণ্ণতার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
বিয়ের পর সন্তান ধারণের সময় ‘প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা’ নামে এক ধরনের মানসিক সমস্যায় ভোগার প্রবণতা থাকে। অল্প বয়সে বিয়ের ফলে তার আবেগেও ম্যাচিউরিটি আসে না। দাম্পত্য জীবনের সম্পর্ক কীভাবে চালিয়ে নেবে, স্ত্রী হিসেবে তার কী দায়িত্ব আছে এই বিষয়গুলো সে বুঝে উঠতে পারে না। ফলে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহেরও সৃষ্টি হতে পারে। ফলে তার ভেতর নানা ধরনের মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।
যার ফলে তাকে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) এমনকি সাইকোসিস বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক অসুবিধার মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে।
হ্যালো: শ্বশুর বাড়ির নতুন পরিবেশ শিশুকে দিশেহারা অবস্থায় ফেলতে পারে বলে আমাদের মনে হয়। এতে তার মানসিক ক্ষতিও নিশ্চয়ই হয়?
হাবিবুর রহমান সজিব: একজন মেয়ে যখন জন্মগ্রহণ করে সে কিন্তু কোনো পরিবারের বউ বা কারো স্ত্রী হিসেবে ম্যাচিউরিটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। এই বিষয়গুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পারিপার্শ্বিক নানা বিষয় থেকে সে ধারাবাহিক ভাবে সে বুঝতে শেখে।
এছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি শিশুর মধ্যে ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক দক্ষতা ও নেতৃত্বগুণ বিকশিত হয়। যে মেয়েটির অল্প বয়সে বিয়ে হলো, তার মাঝে কিন্তু এইসব দক্ষতা বোধের ঘাটতি থেকে যায়। মতামত দানের ক্ষমতা ও অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও মেয়েটি পিছিয়ে পড়ে।
ফলে দেখা যায়, সে কোনো মতামত প্রদান করতে পারে না। তার উপর মতামত চাপিয়ে দেওয়া হয়। শ্বশুরবাড়ির অন্য কারো সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না। এদিকে সে নিজের ক্যারিয়ার বা পড়াশোনার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হলো। স্বামীর উপর নির্ভর হয়ে তাকে চলতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বাগেরহাট।