‘তিনি বলেন, সমাজে যৌতুক প্রথার প্রচলন থাকায় বাবা মা মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চান। কারণ তারা ভাবেন, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে যৌতুক কম দিতে হবে।’
Published : 22 May 2024, 05:53 PM
বাল্যবিয়ের জন্য যৌতুক প্রথাকে দায়ী করেছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম আরেফী। তিনি বলেন, সমাজে যৌতুক প্রথার প্রচলন থাকায় বাবা মা মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চান। কারণ তারা ভাবেন, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে যৌতুক কম দিতে হবে। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে কথোপকথনে বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজী ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
হ্যালো: চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে কম বয়সে বিয়ে হলে কিশোরীর নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, এ বিষয়ে একজন ইমাম হিসেবে মানুষকে কীভাবে সচেতন করেন?
মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম আরেফী: চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে যে, কম বয়সে মেয়ের বিয়ে হলে নানা ধরণের ক্ষতি বা রোগ হতে হতে পারে। আসলে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া ইসলামও সমর্থন করে না। ইসলামের বিধান হলো একজন মেয়ে সাবালিকা অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর বিয়ে দিতে হবে। এজন্য মসজিদের ইমান ও খতিবদের উচিত হলো মসজিদের জুমার নামাজের আলোচনায় এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা। তাহলে বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবে।
হ্যালো: আইন অনুযায়ী কাজীরা বাল্যবিয়ে পড়াতে পারে না, তাই অনেকেই অভিযোগ করেন ইমামরা বাল্যবিয়েতে সহায়তা করে। এ অভিযোগ কতটুকু সত্য?
মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম আরেফী: বাল্যবিবাহে ইমাম সহায়তা করে, আমি মনে করি এই বিষয়টা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ একজন কাজী যদি বিবাহ নিবন্ধন না করে, তাহলে সেখানে গিয়ে একজন ইমান কখনো বিয়ে পড়াতে পারবে না। একজন ইমাম সব কিছু যাচাই করে বিয়ে পড়ায়। আমিও মনে করি, কাজী ও অভিভাবক সচেতন হলে, বাল্যবিবাহ বন্ধ হওয়া সম্ভব ।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে পড়ানোর কোনো অনুরোধ এলে কী করেন?
মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম আরেফী: বাল্যবিয়ে পড়ানোর কোনো প্রস্তাব এলে, সর্বপ্রথম আমার কর্তব্য অভিভাবকদের বোঝানো। আমাদের সমাজের পরিস্থিতি এমন যে, বাবা মা ভাবে মেয়েদের বয়স যত বাড়ছে, যৌতুকের পরিমাণ তত বেড়ে যাচ্ছে। অবিবাহিত কন্যা ঘরে থাকলে বাবা মা তাদেরকে বোঝা বলে মনে করেন। অথচ একজন অভিভাবকের দায়িত্ব হলো উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেওয়া।
আমি মনে করি, আমাদের সমাজ থেকে যৌতুক দূর হলে বাল্যবিয়ে কমে আসবে।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে কী করা উচিত বলে মনে করেন?
মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম আরেফী: বাল্যবিবাহ বন্ধে আমি মনে করি, যৌতুক প্রথা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আইনের কঠোর প্রয়োগ করে যৌতুক নিষিদ্ধ করা উচিত। যৌতুক দেওয়া বন্ধ হলে বাবা মায়েরা সন্তানকে আর বোঝা ভাববে না। তখন তারা মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ শেষে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেবে।
আমি মনে করি যৌতুক প্রথা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আইন বাস্তবায়ন করা হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: নীলফামারী।