বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, আব্দুল্লাহ নামে কেউ আছে তোমাদের ক্লাসে? কিন্তু আমি ব্যর্থ হই বার বারই। তারপরও আশা ছাড়িনি।
Published : 07 Aug 2022, 05:24 PM
তখন ২০১১ সাল। গ্রাম থেকে শহরে এসেছি। নতুন স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি।
ছোটবেলায় আমি বেশ বোকা ছিলাম। কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম না। একদম চুপচাপ আর একা থাকতাম। সেজন্য বন্ধুও ছিল না আমার। তবে ক’দিন যাবৎ ক্লাসে নতুন এক ছেলেকে লক্ষ্য করছি। ছেলেটিকে ভালো বলেই মনে হলো।
সেও অনেকটা আমার মতোই চুপচাপ। ওর সঙ্গে মিশতে শুরু করলাম। কথা বলে জানতে পারি, ওর নাম আব্দুল্লাহ। তারপর থেকে সবসময় আমরা একই বেঞ্চে বসতে শুরু করি। দুজনের যে আগে আসতাম সে একটা জায়গা রেখে দিতাম।
আমরা কখনো কেউ কাউকে হিংসা কিংবা ঝগড়া পর্যন্ত করিনি। ক্লাসে শিক্ষকরা যখন পড়াতেন তখন লুকিয়ে কত গল্প করেছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই! সবসময় সে আমার বিপদে এবং আমি তার বিপদে থাকতাম।
আমাদের মতো বন্ধু বোধ হয় খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। বলা হয়, দুঃসময়ে নাকি সঠিক বন্ধু চেনা যায়। যখন আমাদের ঘিরে ধরেছিল হতাশা, তখন একে অপরকে সাহস দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, মাত্র দুই বছর আমরা একসঙ্গে প্রাথমিকের দুটি ধাপ অতিক্রম করেছি। এরপর সে অন্য স্কুলে ভর্তি হওয়ায় তৃতীয় শ্রেণি থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ নষ্ট হয়ে যায়।
বয়স খুব কম হওয়ায় আমাদের দুজনের যোগাযোগ করার জন্য অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করার ধারণা মাথায় আসেনি। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপ, সেই ২০১৩ সাল থেকে আজ অবধি প্রিয় বন্ধুটির সঙ্গে দেখা নেই। তারপর কতদিন প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি।
বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, আব্দুল্লাহ নামে কেউ আছে তোমাদের ক্লাসে? কিন্তু আমি ব্যর্থ হই বার বারই। তারপরও আশা ছাড়িনি।
কিছুদিন আগেই প্রিয় বন্ধু আব্দুল্লাহর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আমার। খুশি হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু সে আমাকে চিনতে পারেনি। তখন আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। রাগে তার সঙ্গে অভিমানও করেছিলাম। একটু পর যখন আব্বু এসে ঘুম ভাঙিয়ে দিলো, তখন বুঝলাম আসলে এতক্ষণ ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিলাম।
আজ সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে নিয়ে লিখতে পেরে প্রশান্তি অনুভব করছি। যেন মনের ভেতরে জমিয়ে থাকা সব কষ্টগুলো বেরিয়ে আসছে। আমার হারিয়ে ফেলা প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে সবসময় দেখা করার ইচ্ছে জাগে মনে। প্রিয় বন্ধুকে না পেয়ে খুব কষ্ট পাই। জানি না কখনো তার দেখা পাব কিনা।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বগুড়া।