রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান পরিচয় তিনি কবি। মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা রচনায় হাতেখড়ি হয় তার।
Published : 07 Aug 2016, 07:19 PM
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ২৫শে বৈশাখ তার ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী।
তার বাবা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদাসুন্দরী দেবী। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন মা বাবার চতুর্দশ সন্তান।
১৮৭৫ সালে ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মা মারা যান। বাবা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের বেশিরভাগ সময় কলকাতার বাইরে থাকতেন বলে কবিগুরুর শৈশব কেটেছে বাড়ির চাকরদের কাছে।
রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। তবে ধরাবাঁধা পড়ালেখায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগান বাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতেন তিনি।
তিনি প্রথম দেশভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন ১১ বছর বয়সে। ১৮৭৩ সালে তার উপনয়ন হয়। উপনয়ন হলো যজ্ঞোপবীত বা উপবীত ধারন। চলিত বাংলায় একে বলে পৈতে ধারনের অনুষ্ঠান। উপনয়নের পরই বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেশভ্রমণের বের হন তিনি। প্রথমে তারা যান শান্তিনিকেতনে। এখানে বসেই রবীন্দ্রনাথ তার প্রথম নাটক ‘পৃথ্বীরাজ পরাজয়’ রচনা করেন। এই নাটকটির পাণ্ডুলিপি তার জীব্বদশাতেই হারিয়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রধান পরিচয় তিনি কবি। মাত্র আট বছর বয়সে কবিতা রচনায় হাতেখড়ি হয় তার। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর অনুসারী কবি। তার ‘কবিকাহিনী’, ‘বনফুল’ ও ‘ভগ্নহৃদয়’ কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের রচনার প্রভাব সুস্পষ্ট।
তার কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত ‘মানসী’ এবং তার পর প্রকাশিত ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘চৈতালি’, ‘কল্পনা’ ও ‘ক্ষণিকা’ কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা।
১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে ‘নৈবেদ্য’, ‘খেয়া’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’ ও ‘গীতালি' কাব্যগ্রন্থে।
তিনি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে 'গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ' রূপে।
গানের ক্ষেত্রে বাংলা গান আধুনিক হয়ে উঠেছে মূলত কবিগুরু রচিত গানের হাত ধরেই। রবীন্দ্র পরবর্তী যুগেও অনেক কবি, গীতিকার ও লেখকের লেখায় রবি ঠাকুরের প্রভাব দেখা যায়।
বাংলা গান বললে প্রথমে রবীন্দ্রসংগীতের কথাই মাথায় আসে। রবীন্দ্রনাথ রচিত মোট গানের সংখ্যা এক হাজার নয়শ পনরটি। গানগুলোকে তিনি স্বদেশ, প্রেম, পূজা, প্রকৃতি, বিচিত্র ও আনুষ্ঠানিক পর্বে ভাগ করেছেন।
১৩ বছর বয়সে তার লেখা 'গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে' তার রচিত প্রথম সঙ্গীত হিসেবে ধরা হয়। এরপর প্রায় সত্তর বছর ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে গান রচনা করেছেন।
ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি 'ঈশ্বরের রোষ' বলে অভিহিত করলে রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন। কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরাবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল।
মৃত্যুর আগের চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুই বার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা। (প্রতিবেদনটি ২০১৬ সালে প্রকাশিত)