‘প্যাটও চলান লাগে, দেনাও শোধ করা লাগে।’
Published : 31 Aug 2022, 08:26 PM
বগুড়া সদরের বেশ কয়েকটি ময়লার ভাগাড়ে কাজ করছে শিশুরা। চিকিৎসক বলছেন, এই শিশুদের রয়েছে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ময়লার ভ্যান আসা মাত্রই দলবেঁধে ছুটে গিয়ে ঘিরে ধরে এই শিশুরা। মাস্ক, গ্লাভসের মতো কোনো সুরক্ষাসামগ্রী ছাড়াই তারা ময়লা ঘেঁটে প্লাস্টিক আর লোহার মতো সামগ্রী সংগ্রহ করে। যা পরে বিক্রি করে তাদের আয় হয়।
আখিতা নামে ৮ বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে কথা হয়। সে মা-বাবার সঙ্গে একটি বস্তিতে ভাড়া থাকে। সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা অব্দি সে ময়লার ভাগাড়েই থাকে। সে আরও জানায়, পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকলেও সে সুযোগ পায় না।
১১ বছর বয়সী বৈশাখীও ময়লার ভাগাড়ে কাজ করে।
সে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলছিল, “কয়দিন আগে দেনা করে হামার বোনেক বিয়ে দিল হামার মাও। সেল্লে দেনা কে শোধ করবি? দেনার জন্যি হামরা এটি আচ্চি। প্যাটও চলান লাগে, দেনাও শোধ করা লাগে। কেউ সাহায্য করলে, পড়ালেখা করালে হামরা এখানে আসতাম না, হামরা এই এলাকা ছেড়ে দিতাম।”
কথা হয় আখিতার মায়ের সঙ্গে। শিশুটি কেন এখানে কাজে নিয়ে আসেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কাম না করলে হামাকে দেকপি কে? বাচ্চাদের পড়াবেরই তো চাই। কিন্তু পাইনে। হয়তো আপনারা দেকলে হামাকেরে বাচ্চারা পড়ালেখা ভালো করবি। কেউ তো হামাক দ্যকে না। সরকারও তো দ্যকে না। হামরা কাম না করলে চলমু কেমনে? না পায়া তিন ছোলেক লিয়ে ময়লা কুড়োবের আসি। বেচে দিনে দেড়শ-দুইশ হয়।”
এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) শিশু বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ইফফাত আরা শামসাদের সঙ্গে।
তিনি হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ময়লার ভাগাড়ে পচা-বাসি জিনিসসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্য থাকে। ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বিভিন্ন ধারালো বস্তু থাকতে পারে। সেখান থেকে তাদের ইনজুরিও হতে পারে।”
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত আছে বাংলাদেশের ১৭ লাখ শিশু। এই শিশুদের প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের বয়স ৬ থেকে ১১ বছরের মধ্যে। এদের বেশিরভাগই ছেলে শিশু।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বগুড়া।