অনেক পরিবারেই এখনও মেয়েদের চাকরি বা ব্যবসা করাকে ভালোভাবে দেখা হয় না।
Published : 16 Oct 2025, 08:03 PM
সমাজের সব স্তরে নারীর অংশগ্রহণ এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। আমার ধারণা, এর সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের মানসিকতা।
আজও নারীরা নানা ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার। উদাহরণস্বরূপ, মাতৃত্বকালীন ছুটির কথাই ধরা যাক। কর্মজীবী নারীদের ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার নিয়ম আছে। সরকারি আদেশে বাধ্য হয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান এই ছুটি দেয়, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় নানা টালবাহানা। কেউ কেউ ছুটি শেষে ফিরে এসে অতিরিক্ত কাজের চাপের মুখে পড়েন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিস্থিতি আরও কঠিন। সেখানে অনেক সময় মাতৃত্বকালীন ছুটি না দিয়ে নারী কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়। পদোন্নতি বা বেতনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য স্পষ্ট।
এগুলো সেই নারীদের গল্প, যারা অনেক বাধা পেরিয়ে কর্মজীবনে পৌঁছেছেন। কিন্তু দেশের অসংখ্য মেয়ে এখনো সেই সুযোগটুকুও পায় না। অনেকেই মাধ্যমিক পর্যায় শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে।
আমি ঢাকার একটি এলাকায় থাকি। এখানেও দেখি, অনেক পরিবার এখনো মনে করে মেয়েদের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে দেওয়া ভালো। বেশি বয়স হলে নাকি আর বিয়ে হয় না। ফলাফল হিসেবে আমার সহপাঠীদের অধিকাংশই এখন বিবাহিত। নিয়মিত ক্লাস করা বা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও তারা হারাচ্ছে।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় আমাদের শাখায় ছাত্রী ছিল ৫০ জন। এক বছরের মধ্যেই সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ জনে। এটা ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি এলাকার চিত্র। রাজধানীর এমন অবস্থায় দেশের অন্য অঞ্চলের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
অনেক পরিবারেই এখনও মেয়েদের চাকরি বা ব্যবসা করাকে ভালোভাবে দেখা হয় না। স্বামী স্বাবলম্বী হলে মেয়ের কাজ করার প্রয়োজন নেই, এমন ধারণা অনেক শিক্ষিত পরিবারেও টিকে আছে। মেয়েদের কাজ বলতে সমাজের বড় অংশ এখনও গৃহস্থালি কাজ আর সন্তান লালন-পালনকেই বোঝায়।
ফলে মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে না। ঘরে থেকেও তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে পিছিয়ে থাকে, নিজের মত প্রকাশের অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয়।
কিন্তু কবে বদলাবে এরকম মানসিকতা? আমি মনে করি, নারীর প্রকৃত অগ্রযাত্রা শুরু হবে সেই দিন, যেদিন সমাজ নারীকে সহানুভূতির নয়, সক্ষমতার চোখে দেখবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।