'এই উপজেলায় এসে এক বছরে প্রায় ৩০টা বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ আমাদের স্বাগত জানায়। কিন্তু মেয়েপক্ষ ও বরপক্ষ আমাদের বাধা দেয় এবং নানান নেতিবাচক কথায় ছড়ায়।'
Published : 09 May 2024, 05:58 PM
কর্মস্থলে যোগদানের এক বছরের মধ্যে ৩০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন বলে জানান নীলফামারীর ডোমার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম। বাল্যবিয়ের শিকার ও বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া কিশোরীদের পড়াশোনায় ফেরাতেও কাজ করছেন এই কর্মকর্তা। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথোপকথনে বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রশাসনের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে প্রশাসন নিয়মিত কোন ধরনের কাজ করছে?
নাজমুল আলম: বাল্যবিবাহ বন্ধে উপজেলা প্রশাসন থেকে নিয়মিত নানা ধরনের কার্যক্রম নেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও তথ্য অফিসের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত উঠান বৈঠক করে থাকি। এছাড়াও আমাদের উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক একটি কমিটি আছে, এই কমিটি নিয়মিত সভার আয়োজন করে।
আমরা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করি, যাতে কোনো মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার না হয়। পাশাপাশি উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের মিটিং হয়, সেখানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষক, প্রতিনিধি ও অভিভাবকের সমাগম হয়। এই মিটিংয়ে আমরা সবাইকে সচেতন করি, যাতে কোনো বাল্যবিয়ে না হয়। বাল্যবিয়ের খবর পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসি। এভাবেই আমরা আমাদের উপজেলায় বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
হ্যালো: ঠিক কী কী কারণে বাল্যবিয়ে বেশি হয় বলে আপনি মনে করেন?
নাজমুল আলম: বাল্যবিয়ের অনেকগুলো কারণ আছে। যেটা স্থান ও এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, ডোমার উপজেলায় বাল্যবিয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে প্রথমেই বলা যায় কুসংস্কার, শিক্ষার অভাব, আর্থিক অসচ্ছলতা ও মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের পেছনে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে আপনি কীভাবে দেখেন?
নাজমুল আলম: আমরা মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক অভিভাবক মনে করেন মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে। তখন মা বাবার কাছে মেয়েদের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে নিজেদের দায়মুক্ত করতে চান। এটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে আমরা মনে করি।
হ্যালো: আপনার উপজেলায় বাল্যবিয়ের পরিমাণ কেমন? এই পর্যন্ত কতগুলো বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন? বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া কেমন হয়?
নাজমুল আলম: এই উপজেলায় এসে এক বছরে প্রায় ৩০টা বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে গেলে এলাকাবাসী ও সুশীল সমাজ আমাদের স্বাগত জানায়। কিন্তু মেয়েপক্ষ ও বরপক্ষ আমাদের বাধা দেয় এবং নানান নেতিবাচক কথায় ছড়ায়।
হ্যালো: ইতোমধ্যে বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে এমন কিশোরীরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে এ ব্যাপারে প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হতে পারে? আদৌ এমন পদক্ষেপ নেওয়া আছে কিনা? থাকলে সেগুলো কী?
নাজমুল আলম: বাল্যবিবাহ থেকে যে সব মেয়ে মুক্তি পেয়েছে, তাদের পড়াশোনা এবং চাকরি ক্ষেত্রে সর্বাধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। এছাড়াও আমাদের এইখানে মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও আছে, তাদের সঙ্গে বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া মেয়েদের যুক্ত করিয়ে দিচ্ছি। এই মেয়েদের বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণও দেওয়া হয়। এছাড়া স্কুলে যেন কোনো ধরনের খরচ নেওয়া না হয়, সেটাও আমরা নিশ্চিত করছি। আমরা আশা করছি, বাল্যবিবাহ থেকে ফিরে আসা মেয়েরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: নীলফামারী।