‘শিশুদের খেলার মাঠ যে হারিয়ে যাচ্ছে, এটা এখন আমাদের দেশের প্রায় সব শহর ও গ্রামের বাস্তবতা।’
Published : 06 Nov 2025, 08:49 PM
আমি ছোটবেলায় বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে পাড়ার মাঠে দৌড়ে যেতাম। সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম। কিন্তু এখন সেই মাঠ আর নেই। সেখানে একটি বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে।
সন্ধ্যার পর যেখানে শিশুদের হাসির শব্দে মুখর থাকত চারপাশ, এখন সেখানে শুধু বৈদ্যুতিক বাতির ঝলকানি। যা মেনে নেওয়াটা খুবই কষ্টের।
শিশুদের খেলার মাঠ যে হারিয়ে যাচ্ছে এটা এখন আমাদের দেশের প্রায় সব শহর ও গ্রামের বাস্তবতা। জীবনের প্রয়োজনে এগুলোর প্রয়োজন আছে। তবে আমরা অপরিকল্পিত নগরায়ণের শিকার।
বাড়ছে নানা ধরনের স্থাপনা, কিন্তু শিশুদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি হচ্ছে না। সরকারি পরিকল্পনাতেও শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী জায়গাটিকে প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।
ঢাকার মত বড় শহরে এখন বাচ্চারা খেলাধুলার জন্য আশ্রয় খুঁজছে ছাদে কিংবা সংকীর্ণ গলিতে। অথচ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক গঠন, সামাজিক আচরণ ও শিক্ষাগত পারফরম্যান্সের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
গ্রাম বা ছোট শহরেও প্রায় একই দৃশ্য। আগে যেখানে ছিল খোলা মাঠ, এখন সেখানে উঠছে বসতবাড়ি। জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে মনে করেন, মাঠ রাখা মানে ‘অর্থের অপচয়’।
অথচ সেই জমিতেই একসময় গ্রামের শিশুরা ফুটবল খেলত, উৎসব করত। আমার গ্রামের স্কুলের পাশের মাঠে একসময় হত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, এখন সেখানে দোকানপাট আর ছোট ছোট ঘর। সেই মাঠে দাঁড়িয়ে আমি আজ শুধু কল্পনায় দেখি আমার শৈশবকে।
খেলার মাঠ না থাকায় শিশুরা ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। মোবাইল গেম, ইউটিউব কিংবা ফেসবুকই এখন তাদের বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু এতে শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, চোখ ও মস্তিষ্কে পড়ছে অতিরিক্ত চাপ, বাড়ছে মানসিক একাকিত্ব।
একটি শিশু যখন মাঠে দৌড়ায়, তখন সে শুধু খেলছে না, সে শিখছে দলবদ্ধতা, বন্ধুত্ব, পরাজয় মেনে নেওয়া, আর পরিশ্রমের মূল্য। আমরা আসলে এই শেখার জায়গাটাই হারিয়ে ফেলছি।
স্থানীয় সরকার বা সিটি করপোরেশনগুলো প্রায়ই বলে, নতুন শহর পরিকল্পনায় খেলার মাঠ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সেই মাঠগুলো দখল হয়ে যায় বা অব্যবহৃত থেকে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়।
আমি মনে করি, শিশুদের মাঠ ফিরিয়ে দেওয়া মানে তাদের শৈশব ফিরিয়ে দেওয়া। যে দেশে শিশুরা মাঠ হারায়, সেই দেশে ভবিষ্যতও হারিয়ে যায়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: সিলেট।