‘সবাই এত ব্যস্ত যে, কারও সঙ্গে কারও কথা বলারও অবসর নেই। ময়লা-বোঝাই ট্রাক এলেই ছুটে যায় তারা, কিছু পাওয়ার আশায়।’
Published : 06 Nov 2025, 05:56 PM
ঢাকা-সাভার মহাসড়কের পাশে, আমিন বাজারের কাছেই ঘনবসতিপূর্ণ একটি গ্রাম বলিয়ারপুর। মহাসড়কের পাশেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার ভাগাড় আছে।
এখানে সারারাত ধরে শহরের উত্তরাংশ ও আশপাশের এলাকা থেকে আসা ময়লা-বোঝাই ট্রাকগুলো এখানে খোলা আকাশের নিচে একের পর এক খালি করা হয়। আর একদল মানুষ অপেক্ষা করে ভোরের আলো ফোটার।
রাতের অন্ধকার কেটে যেতেই তারা বস্তা কাঁধে ছুটে আসে এই বিশাল ময়লার ভাগারে। শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই আছে সেই দলে। এখানে প্রতিটি পদক্ষেপে বিপদ, তবু ক্ষুধার কাছে সব ভয় যেন তুচ্ছ।
কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, মুখে মাস্কও নয়। তারা ময়লার স্তুপ ঘেঁটে খুঁজে বেড়ায় ছেঁড়া পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, ভাঙা যন্ত্রপাতি, গৃহস্থালির ফেলে দেওয়া হাঁড়ি-পাতিল, লোহা বা টিনের টুকরো, ইলেকট্রনিক পণ্য কিংবা পুরোনো কার্টনের অংশ।
তাদের অনেকেই আধ-খাওয়া আপেল, পেয়ারার টুকরো, পচা কমলা, ফেলে দেওয়া সবজি কিংবা বাসি পাউরুটিও কুড়িয়ে নেয়। এর মধ্যেই কোনোটা তাদের সরাসরি খাবার, কোনোটা আবার চাল-ডাল কিনতে অর্থের উৎস। এই ময়লার ভাগারেই যেন তাদের জীবনের চক্র ঘুরছে অবিরাম।
সবাই এত ব্যস্ত যে, কারও সঙ্গে কারও কথা বলারও অবসর নেই। ময়লা-বোঝাই ট্রাক এলেই ছুটে যায় তারা, কিছু পাওয়ার আশায়। কেউ পেছনে ঘুরলেও কথা বলতে চায় না।
যে বয়সে শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা, কিশোরের মাঠ মাতানোর কথা ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে, তখন তারা অসহ্য দুর্গন্ধ আর সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে এক ঢিবি (ময়লার স্তূপ) থেকে আরেক ঢিবিতে ছুটে চলে।
সেই জায়গাতেই কাজ করছিল এক কিশোরী, নাম তার টিয়া। ছবি তুলতে রাজি হলেও কথা বলতে চায় না সে। কেবল ‘কেমন আছো?’ প্রশ্নের জবাবে নিস্তব্ধ গলায় জবাব দিল, ‘ভালা নাই, ভালা নাই।’
আমরা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন আর সংস্কারের নানা গল্প শুনি। কিন্তু শুধু দুবেলা খাবারের জন্য জীবন হাতে নিয়ে যাদের এই ভয়ানক লড়াই, তাদের জীবনে পৌঁছায়নি সেই উন্নয়নের ছোঁয়া।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।