তবে সেই দিন আর নেই। এখন আমার পরিবার ছোট হয়ে এসেছে।
Published : 27 Mar 2025, 08:57 PM
আমি যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠেছি। যেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন ও দাদি ছিলেন। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের কাছে ঈদ ছিল আনন্দে ভরা এক উৎসব। তবে সময়ের সাথে সেই আনন্দ যেন ফিকে হয়ে গেছে।
আগে রোজার শুরু থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের পরিকল্পনা শুরু করে দিতাম। বিশেষ করে চাঁদরাত ঘিরে থাকত নানা প্রস্তুতি। আর এখন ঈদ আসে অন্যভাবে।
শৈশবে রোজা এলে সবগুলো রোজা রাখার প্রতিজ্ঞা করতাম। যদিও ছোট থাকার কারণে ১০টার বেশি রোজা রাখা হত না। এই সংখ্যাটা পেরিয়ে প্রথম যখন ১৫টা রোজা রেখেছিলাম, বাবা খুশিতে অফিসের সবাই এই কথা বলেছিলেন।
আগে রোজার বিকেলগুলো কাটত চাচাত ভাই-বোন ও বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। মা বিকেল হলে ইফতারের জন্য ভাজাপোড়া তৈরি করতে নেমে পড়তেন। আমি রান্নাঘরে গিয়ে বেগুনি নিয়ে খেলতে চলে যেতাম।
এই দৃশ্য দেখে বড় ভাই মাঝে মাঝে রাগ করতেন কারণ তিনিই ইফতার প্রস্তুতির তদারকির দায়িত্ব সামলাতেন। তার রেগে যাওয়া দেখে আমি আরও আনন্দ পেতাম। আর হ্যাঁ, প্রথম রোজা থেকে ইফতারের শরবত বানানোর কাজটা আমাকেই সামলাতে হত।
চাঁদরাত ছিল বিশেষ মজা করার দিন। বন্ধুদের সঙ্গে টাকা তুলে আতশবাজি কিনে এগুলো ফোটাতাম। তখন আতশবাজি ফোটানোর উদ্দেশ্য ছিল কাউকে ঘুমাতে না দেওয়া। তবে বড় হওয়ার পর বুঝেছি, আতশবাজির কারণে না ঘুমাতে পেরে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীদের অনেক সমস্যা হতে পারে।
ঈদের জন্য সবাই একই রকম জামা কিনব বললেও শেষ পর্যন্ত কেনা হত ভিন্ন ভিন্ন রকম। প্রতিযোগিতা থাকত কার জামা বেশি আলাদা। এই প্রতিযোগিতার মাঝেও আমি একবার এক হাত লম্বা আর অন্য হাতে ছোট হাতার জামা কিনে ফেলেছিলাম! আমার এই কাণ্ড দেখে সবাই মজা পেয়েছিল।
ঈদের দিন সালামির জন্য আমি আর ছোট চাচাত বোন একাই বের হতাম। কারণ কম মানুষ গেলে বেশি সালামি পাওয়া যেত। ভাইয়ার কাছ থেকে সালামি না পেলে ঝগড়া করা ছিল নিয়ম।
তবে সেই দিন আর নেই। এখন আমার পরিবার ছোট হয়ে এসেছে। সদস্যরা কেউ পৃথিবী ছেড়েছেন, কেউ দেশ। ইফতারে আগের মত আয়োজন হয় না।
আর ঈদের আনন্দ তো ফোনের পর্দায় সীমাবদ্ধ। আজ মনে হয়, সবাইকে যদি এক ঘণ্টার জন্যও ফিরে পেতাম কত ভালোই না হতো! বড় হওয়ার সাথে সাথে এভাবেই বুঝি ঈদের আনন্দ কমে যায়?
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।