আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার জন্য আমরা বই পড়ি, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনি। মুক্তিযুদ্ধকে বোঝার জন্য আমরা বিভিন্ন নাটক, সিনেমা এবং ডকুমেন্টারি দেখি।
Published : 26 Mar 2022, 07:02 PM
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতগুলো সিনেমা নির্মিত হয়েছে মেঘের অনেক রং তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৭৬ সালে শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীসহ মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় ছবিটি।
সিনেমা গবেষক অনুপম হায়াৎ হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন এটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম রঙিন সিনেমা।
যুদ্ধ মানে শুধু অস্ত্র দিয়ে দুই পক্ষের লড়াইটাই শেষ কথা নয়। একটি যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই শুরু হয় বেঁচে থাকার আরেক লড়াই। মুক্তিযুদ্ধ এবং একই সাথে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
মেঘের অনেক রঙ সিনেমায় মেঘের সাথে মানুষের জীবনের তুলনা করা হয়েছে। মেঘ যেমন ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলায় তেমনি মানুষের জীবনের গতিও সবসময় এক রকম থাকে না।
সিনেমায় একটি পরিবারের গল্প দেখানো হয়। যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সেখানে দেখানো হয় ওমর এলাহী নামের একজন চিকিৎসক, তার স্ত্রী রুমা এবং ছোট্ট ছেলে আদনানকে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায়।
ভাগ্যক্রমে পাকবাহিনীর কাছ থেকে ছাড়া পান ওমর, কিন্তু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন পরিবার থেকে। যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার কাজে। এসময় হতাশাগ্রস্ত ওমরের পাশে এসে দাঁড়ান পাহাড়ি মেয়ে মাথিন।
এক সময় দেশ স্বাধীন হয়। কেটে যায় আরো সময়। পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে লাঞ্ছিত রুমা আশ্রয় পায় একটি পুনর্বাসনকেন্দ্রে। সেখানে ছেলে আদনানকে নিয়েই তার পৃথিবী গড়ে ওঠে। একদিন তার চিকিৎসার জন্য একজন নতুন চিকিৎসকের কাছে পাঠানো হয়। সেই চিকিৎসক আর কেউ নয়, তার স্বামী ওমর। সঙ্গে ছিল একটি মেয়ে। একজন নার্সের কাছে রুমা জানতে পারে মেয়েটি ওমরের স্ত্রী।
এরপর রুমা আদনানকে কৌশলে ওমরের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং নিজে আত্মহত্যা করে। এরপর পুনর্বাসনকেন্দ্রে এক নারীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে রুমাকে দেখতে পায় ওমর। এবং আন্দাজ করে আদনান হয়তো তারই ছেলে। সে আদনানকে নিয়ে নদীর ধারে বেড়াতে যায়। সেখানে সে আদনানের সাথে কথা বলে এবং তার হাতে বাঁধা একটি কাগজে রুমার চিঠি পায়।
সিনেমাটি থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পারি। বেঁচে থাকার জন্য তখন প্রতিটি মানুষকেই লড়াই করতে হয়েছে। ৫০ বছর পরও সিনেমাটি দেখে আমরা সেই প্রেক্ষাপটে নিজেদের কল্পনা করলে বুঝতে পারি এর ভয়াবহতা। কিছুটা হলেও উপলব্ধি করতে পারি মুক্তিযুদ্ধ এবং তার প্রভাব।