সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের বরিশাল বস্তির কয়েকজন শিশু ও তাদের বাবা মার সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।
Published : 07 May 2024, 04:02 PM
অভাব অনটনে দিন পার করলেও অনেক চা শ্রমিকই এখন নিজের কন্যা সন্তানের বাল্যবিয়ে দিতে চান না। কষ্ট করে হলেও মেয়েদের লেখাপড়া করাতে চান তারা।
শিশু বিয়ে নিয়ে চা বাগানের শ্রমিক পরিবারগুলো কতটুকু সচেতন, তা জানার চেষ্টা করেছে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের বরিশাল বস্তির কয়েকজন শিশু ও তাদের বাবা মার সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর।
কমলা বেগম নামের ৪০ বছর বয়সী একজন অভিভাবক বলেন, বাল্যবিয়ে তিনি সচেতন। অল্প বয়সে কন্যা শিশুদের বিয়ে দেওয়া যে কোনো মঙ্গল বয়ে আনে না, তা তিনি ভালো করেই জানেন।
তিনি বলেন, “আমি কখনোই আমার মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিব না। আমি জানি বাল্যবিয়ে দেওয়া ভালো না। ১৮ বছরের পরে একটা মেয়ের বিয়ে হলে, তা মেয়ের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে দেওয়া হবে।
“যদি মেয়েকে বাল্যবিয়ে দেই, তাহলে তার বাচ্চাকাচ্চা হতে কষ্ট হবে। তারপর সংসার কি জিনিস তা সে বুঝবে না। জামাইয়ের সঙ্গে যে সংসার করবে, এটাই সে বুঝবে না। সে সংসার করবে কেমনে? যেহেতু তার বাচ্চা বাচ্চা বয়স।”
নিজের কন্যা সন্তানকে পড়ালেখা শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন এই নারীর।
এই নারী আরও বলেন, “আমার মেয়ে যখন পড়ালেখা করে বড় পর্যায়ে যাবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। তখন আমি বিয়ে দিব।”
হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় মেঘলা আক্তার নামের ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীর। এই কিশোরীও বাল্যবিয়ে নিয়ে সচেতন আছে বলে জানায়।
সে বলে, “আমরা বাল্যবিবাহ নিয়ে অনেক সচেতন আছি। কাউকে বাল্যবিয়ে করতে দিব না। কাউকে বাল্যবিবাহ করতে দেখলে আমরা প্রতিবাদ করব।”
মেঘলা বলে, “আমি বাল্যবিবাহ করলে আমার শারীরিক সমস্যা হবে। আমি চাই পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হব। আমার উপযুক্ত বয়স হলে বিয়ে করব।”
চা বাগানে কাজ করেন আব্দুল রব। তার কথাতেও বোঝা গেল বাল্যবিয়ে নিয়ে বেশ সচেতনই তিনি।
তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিব না। বাল্যবিবাহ দেওয়া অপরাধ।”
বিয়ে না করে নিজ যোগ্যতায় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহফুজা আক্তারের।
সে বলে, “আমি ১৮ বছরের নিচে বিয়ে করব না। আমি পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই এবং নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।”
১৮ বছরের পরেই বিয়ে করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় নবম শ্রেণির ছাত্রী শিমলা আক্তার।
হ্যালোকে সে বলে, “আমি ১৮ বছরের আগে বিয়া করব না। আমি পড়ালেখা করব।”
শুধু কন্যা শিশুর জন্যই নয়, ছেলে সন্তানের বেলাতে বাল্যবিয়ের পক্ষে নন মেঘনাথ গোয়ালা নামের এক অভিভাবক। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে একটা আছে। ১৮ বছর পূর্ণ না হলে, আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না। ছেলের বেলাতেও একই। উপযুক্ত হওয়ার পর তাকে বিয়ে করাব। আমার পরিকল্পনা আমার ছেলে মেয়েকে শিক্ষিত করব।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: সিলেট।