রূপালি বেগম মানুষের বাসায় ঠিকা বুয়ার কাজ করেন। সকালে কাজে বের হন না খেয়েই। বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। কেউ কেউ খাবারও দেন। দিন শেষে সেই খাবার নিয়ে ঘরে ফিরে ছোট মেয়ে আশা আর বেকার, নেশাখোর স্বামীর সাথে সেই খাবার ভাগ করে খান।
Published : 30 Jul 2015, 02:01 PM
স্বামী কাজ করতে চান না। স্ত্রীকে বলেন, “তুই আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আমি বসে বসেই খাব।”
মানুষের কাছে সাহায্য নিয়ে, ধার করে দু দফায় স্বামীকে রিকশা কিনে দিয়েছেন। দুবারই নেশার টাকা যোগাতে তা বেচে দিয়ে আবার বাড়ি বসে খাওয়া শুরু করেছেন।
দুয়েকদিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা এনে দেন, পরদিন তার চেয়ে বেশি টাকা দাবি করেন। না দিলে মারধর শুরু করেন স্ত্রীকে। স্ত্রী উপায় অন্তর না দেখে টাকা দিয়ে দেন স্বামীকে।
নেশা করে শুধু নিজের জন্য বাড়িতে দুধ, কলা কিনে এনে খায়। তার দাবি, আরও ভালো খাবার দিতে হবে তাকে।
এই শেষ নয়। আরেকটি বিয়েও করেছেন। নতুন বউয়ের কাছে গিয়েও থাকেন মাঝে মাঝে। আশার মা বলেন, “ তুমি তো আর একটা বিয়ে করেছ। আমাকে তুমি তালাক দাও।”
আশার বাপ বলে, “আমি যতজনকে খুশি বিয়ে করব, সেটা আমার ইচ্ছা। তুই কামাই করে আমাকে খাওয়াবি। তোকে আমি কখনই ছাড়ব না।”
রূপালি বেগম জানেন না এর থেকে মুক্তির উপায়। কাজ করে স্বামীকে খাওয়ায় আর তার বদলে তার মার খায়।
রূপালির দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে গেঞ্জির কারখানায় কাজ করে। ওর বয়স ১৪ বছর। নেশার খরচ জুগিয়ে তিন মা মেয়ে যা পায় ভাগ করে খায়।
মেয়েদের খরচ দিতে বললে স্বামী বলেন, “তুই খাওয়াবি তোর মেয়েদেরকে। আমি কেন খাওয়াবো? তুই প্রতিদিন আমাকেও হাত খরচের টাকা দিবি। নইলে তোকে মেরে তক্তা বানাব।”
বড় মেয়ে মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে মামাদের সাথে মাটি কাটার কাজও করে। পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে সেই কাজ থেকে কয়েকবার পালিয়েছে সে।
রূপালি বেগমের দুঃখের শেষ নেই। স্বামীর মার খেতে চান না, চা্ন না তার নেশার টাকা যোগাড় করতে। মরতেও চান না তিনি। বলেন, “মেয়েদুটোকে রেখে মরেও শান্তি পাব না।”