কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর রাজাপালং ইউনিয়নে এক সময়ের কোনোমতে বেঁচে থাকা এক নাম আবুল কালাম। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন কৃষক। তার একটি নার্সারি রয়েছে। উন্নতজাতের বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারা করে সেগুলো বেচেন।
Published : 10 Jul 2016, 07:17 PM
এই নার্সারি ব্যবসা করে তিনি এখন সচ্ছল।
সম্প্রতি হ্যালোর কাছে নিজের জীবনের কথা তুলে ধরেন তিনি।
হ্যালোঃ সুপ্রভাত। কেমন আছেন?
আবুল কালামঃ ধন্যবাদ। ভালো আছি। তুমি?
হ্যালোঃ আমিও আপনাদের আশীর্বাদে ভালো আছি। দেখতেই পাচ্ছি আপনি নার্সারি করছেন, খুব সুন্দর। এর আগে কি করতেন?
আবুল কালামঃ ২০০৫ সাল থেকে নার্সারিকে আমি পেশা হিসেবে নিয়েছি। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারে আর্থিক সমস্যা তৈরি হয়। আমার বড় ভাই রফিক আহমদ স্থানীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। আমি গ্রাম থেকে হাস-মুরগি কিনে বাজারে বিক্রি করতাম। সেজ ও ছোট ভাইও কিছু কাজ করত। সবাই মিলে যা উপার্জন করতাম তা দিয়ে অতি কষ্টে খাওয়া-পরা ও ছোট এক ভাই ও এক বোনের পড়ালেখা চলত।
তখন থেকেই আমার নার্সারি করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু অর্থ ছিল না। ছোট ভাইয়ের চাকরি হওয়াতে আমার সেই আশা পূর্ণ হয় এবং আলোর মুখ দেখতে শুরু করি।
হ্যালোঃ নার্সারিকে পেশা হিসেবে গ্রহণে আপনি কতটুকু সফল হতে পেরেছেন?
আবুল কালামঃ আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। আমার মতে সফলতা নির্ভর করে বিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমের উপর। আমি কাজের প্রতি বিশ্বাস রেখে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। এজন্যই আমি সফল।
কয়েক দিন আগে এক ক্রেতা আমার বাড়িতে আম নিয়ে বেড়াতে আসেন। তিনি বললেন, "আপনার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া গাছগুলোতে প্রচুর আম ধরেছে। সেখান থেকে এই কয়েকটা আপনার জন্য এনেছি।"
একজন ক্রেতা যখন বিক্রেতার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তার জন্য উপহার আনেন এর চেয়ে বেশি খুশি ও সফলতা আর কী হতে পারে?
হ্যালোঃ এই নার্সারি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এই কাজ করতে গিয়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়েছে?
আবুল কালামঃ আমি সবসময় ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করি। খুব অল্প পরিমাণে বিক্রি করি কিন্তু ভালো মানের চারাগাছ বিক্রি করি।
গাছ রোপণ খুবই ভাল কাজ। গাছ অমাদের প্রাণ বাঁচায় ও পরিবেশ ভালো রাখে।
প্রতিবন্ধকতা হল, দেখতেই পাচ্ছ এই ছোট্ট ভিটে বাড়িতে নার্সারি করি। এত অল্প জায়গায় বেশি গাছ লাগান যায় না। আমার আর্থিক সঙ্গতি খুব একটা ভালো নয় যে নার্সারির জন্য জমি কিনব।
হ্যালোঃ আপনার পরিবারে কে কে আছেন এবং কে কি করেন?
আবুল কালামঃ আমার পরিবারে আমিই কর্তা। আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সবাই পড়ালেখা করে। ছোট ছেলেটি ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় খুব ভালো করেছে। ছোট মেয়েটি ২০১৫ সালের জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ পাঁচ পেয়েছে। আমার স্বপ্ন সে একদিন চিকিৎসক হয়ে গরিব মানুষের চিকিৎসা করবে।
হ্যালোঃ নার্সারিকে যারা পেশা হিসেবে নিতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কিছু বলবেন?
আবুল কালামঃ এজন্য প্রথমে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। যেমন- বীজ কেমন ক্রয় করবে, মানসম্মত বীজ চিনতে হবে, উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা দরকার, মাটিকে সঠিক নিয়মে প্রস্তুত করতে হবে, সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ জানতে হবে ইত্যাদি আর কি। কাজের প্রতি বিশ্বাস রেখে সততার সাথে পরিশ্রম করলে এ পেশায় স্বল্প সময়ে সাফল্য আসবে। আমার মনে হয় যারা লেখাপড়া করে ও চাকরির খোঁজে বসে আছে তারা পেশা হিসেবে নার্সারিকে নিতে পারে। এতে বেকারত্ব ও আর্থিক সমস্য উভয়ই কমবে। এছাড়াও দেশের জন্য এ পেশা মঙ্গলজনক।
হ্যালোঃ হ্যালোকে সময় দেওয়ার জন্য অপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার জন্য শুভকামনা রাখবেন।
আবুল কালামঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। তোমাকেও ধন্যবাদ।