গেল সাড়ে সাত মাসে দেশে অনুভূত ৭টি ভূমিকম্পের খবর দিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
Published : 29 Mar 2025, 07:37 PM
শুক্রবার মিয়ানমারে ৭ মাত্রার ভূকম্পন হয়। এর ফলে কেঁপে উঠে আমাদের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা।
সেখানে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়। প্রথমটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। পরে ১২ মিনিটের ব্যবধানে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪।
এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের এক মডেলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হল—এগুলো খুবই ঘন ঘন সময়ে হয়েছে।
গেল সাড়ে সাত মাসে দেশে অনুভূত ৭টি ভূমিকম্পের খবর দিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
এই মাসেরই ৫ তারিখ মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ভারতের মণিপুরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়, যা অনুভূত হয়েছে ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকা থেকে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প হয়। এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১। একই মাসের ৩ তারিখ আরেকটি ভূমিকম্প ঢাকাসহ দেশের অনেক এলাকায় অনুভূত হয়।
এর আগে ২ ডিসেম্বর, ১৭ অক্টোবর, ১৭ সেপ্টেম্বর ও ১৪ অগাস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়।
ভূমিকম্প সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে থাকে আর্থকোয়েকলিস্ট নামের একটি ওয়েবসাইট। তাদের তথ্যমতে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ৩০০ কিলোমিটারের (১৮৬ মাইল) মধ্যে ৪ বা তার বেশি মাত্রার ৫৭১টি ভূমিকম্প হয়েছে।
এর মানে, গড়ে প্রতি বছর ৫৭টি ভূমিকম্প হয়। অর্থাৎ, প্রতি মাসে প্রায় ৪টি এবং প্রায় প্রতি ছয় দিনেই ভূমিকম্প ঘটে।
ভূতাত্ত্বিকভাবে ভূমিকম্পের একাধিক উৎস বাংলাদেশের কাছাকাছি থাকায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্যোগে তৈরি হতে পারে। তাছাড়া ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের সক্ষমতা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়েছে।
অনেক ভবন ভূমিকম্প সহনীয় নয়। তাছাড়া, ভূমিকম্প আঘাত হানলে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ আছে কিনা সেটি নিয়েও রয়েছে ভয়।
দেশে কয়েক কোটি শিশু-কিশোর রয়েছে, তারা তো বটেই, অনেক প্রাপ্ত বয়ষ্কদেরও নেই ভুমিকম্পের সময়, আগে ও পরে কী করতে হবে সে সংক্রান্ত কোনো প্রশিক্ষণ।
আমরা হয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে পারব না, কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা সম্ভব।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের পর বাংলাদেশেও একইমাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে সতর্ক হতে বলেছে ফায়ার সার্ভিস।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে শনিবার ফায়ার সার্ভিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একগুচ্ছ পরামর্শ দিয়েছে, যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জরুরি সেবাদানকারী সংস্থাটি বলছে, ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি করা আমাদের সুরক্ষা দিতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এবং পুরোনো ভবনগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বহুতল ও বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
এছাড়া, ইউটিলিটি সার্ভিসের মধ্যে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের লাইন ঠিকঠাক আছে কি না নিশ্চিত করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ, হাসপাতালের মত জরুরি টেলিফোন নম্বরগুলো নিজেদের কাছে রাখার পাশাপাশি সব ভবন বা স্থাপনায় দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখার পরামর্শ তাদের।
ভূমিকম্প হলে কী করতে হবে, সেটা রপ্ত করার জন্য নিয়মিত মহড়া অনুশীলন ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ভলান্টিয়ার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টিকেও তারা গুরুত্ব দিয়েছে, যাতে বিপদের সময় অন্যদের পাশে দাঁড়ানো যায়।
এছাড়াও, জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সরঞ্জাম বাসাবাড়িতে নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করার কথা বলছে সংস্থাটি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—টর্চলাইট, রেডিও (অতিরিক্ত ব্যাটারিসহ), বাঁশি, হ্যামার, হেলমেট, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ফার্স্ট এইড বক্স ও শিশুযত্নের সামগ্রী।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।