'আমি এখনো সেই টিকিটটা স্মৃতির জন্য রেখে দিয়েছি।'
Published : 01 Apr 2025, 02:23 PM
আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের ও স্মরণীয় ঈদ ছিল ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতর। কারণ সেই ঈদে পরিবারের প্রায় সবাই একসঙ্গে হয়েছিলাম, আর সেই আনন্দটুকু ছিল সত্যিই অমূল্য।
সাধারণত নিজ বাড়িতেই আমার ঈদ উদযাপন করা হয়। আমাদের বাড়ি ঈদগাহের একদম পাশেই, তাই ঈদের সকাল শুরু হয় অনেকটা উৎসবের শব্দে ভরে ওঠা পরিবেশে।ভোর পাঁচটা থেকেই মাইকে ঈদের আলোচনা আর নামাজের প্রস্তুতির ঘোষণা শুনে ঘুম ভেঙে যায়।
দাদুর ঘরের জানালা দিয়েই দেখা যায় ঈদগাহের সব প্রস্তুতি। এমনকি বাড়ির পুকুর পাড়ে দাঁড়ালেই দেখা যায় কারা কারা এসেছে, কী করছে।
বাড়ির সবার জন্য সকালে গোসল করাটা ঈদের দিনের একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। দাদু তো ঘুম ভাঙার পর থেকেই তাগিদ দিতে শুরু করেন। গোসল শেষে বাড়ির মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে সবাই ঈদের নামাজ পড়তে যায়।
ঈদের আরেকটা আনন্দের জায়গা ছিল ঈদের মেলা। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় যাওয়া ছিল ঈদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সময়। ঈদ সালামি সংগ্রহ করে নতুন নতুন মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল কেনা আর বাতাসা খাওয়া যেন ঈদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল।
আমার ছোট বোন তো আগেই ঠিক করে রাখত সালামির টাকা দিয়ে কী কিনবে। এখনও ছোট ভাইবোনরা মেলায় গেলে আমি তাদের বাতাসা আনতে বলি। এই ছোট ছোট আনন্দগুলো মিলেই আমার কাছে ঈদের মানে তৈরি হয়।
আর ২০২৪ সালের ঈদটা তো আমার জীবনের সবচেয়ে বিশেষ ছিল। কারণ আমরা সেই ঈদটি মামার বাসায় একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম।
আমি, মা, খালাত বোন, খালা, মামা-মামি সবাই এক জায়গায় ছিলাম। খালামণি যিনি আমার আপন বোনের মত, তিনি ঈদের আগের দিন অনেক রকম সেমাই রান্না করেছিলেন।
ঈদের পরদিন আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম আহসান মঞ্জিলে। বহুদিন ধরে ইচ্ছে ছিল সেখানে যাওয়ার, কিন্তু হয়ে ওঠেনি। মামির উদ্যোগে অবশেষে সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়।
মামা আমাদের জন্য টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে। আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে অবস্থিত, তাই নদীটিও দেখা হয়েছিল কাছ থেকে। আমি এখনো সেই টিকিটটা স্মৃতির জন্য রেখে দিয়েছি।
সেই ঈদে আত্মীয়স্বজনদের একসঙ্গে পাওয়া, ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া আর নতুন অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে যে ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল, তা এখনো মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দেয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।