ইউএনএফসিসিসি’র উদ্যোগে জার্মানির বার্লিন শহরে ১৯৯৫ সালে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
Published : 12 Nov 2024, 09:56 PM
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। কেননা জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনে নানা ক্ষতিকর প্রভাব এখন দৃশ্যমান। প্রতি বছর কপ সম্মেলনকে ঘিরে জলবায়ু সম্পর্কিত আলোচনা বাড়তি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এই ‘কপ সম্মেলন’ বিষয়টি আসলে কী, এখানে কী করা হয়? আর কেন এই সম্মেলনকে ঘিরে এত আলোচনা?
সহজ ভাষায় কপ সম্মেলন হল জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি সম্মেলন। যেখানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তি এবং পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ এই বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নিয়ে থাকেন।
কপ সম্মেলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের নাম হল ‘ইউনাইটেড নেশন ফ্রেইমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (ইউএনএফসিসিসি)। এটি ১৯৯২ সালে স্বাক্ষর হওয়া একটি চুক্তি, যার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনা ও একসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করা।
ইউএনএফসিসিসি’র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ ও অঞ্চলগুলো কপ সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকে। যা কপ শব্দটির পূর্ণরূপ (কনভেনশন অব কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস) থেকে স্পষ্ট হওয়া যায়। এই সম্মেলনে জলবায়ু বিষয়ে আলোচনা, এ নিয়ে লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও এর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে।
ইউএনএফসিসিসি’র উদ্যোগে জার্মানির বার্লিন শহরে ১৯৯৫ সালে প্রথম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে এই সম্মেলন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠে। কপ শব্দটির পর যে সংখ্যাটির উল্লেখ থাকে সেটি সম্মেলনটি কততম আয়োজন তা নির্দিষ্ট করে থাকে।
কপ-৩ সম্মেলনে গৃহিত হওয়া ‘কিয়েটো প্রটোকল’ নামের একটি চুক্তি প্রথম আলোচনায় আসে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ানো রোধ করতে এবং গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ কমানোর জন্য এই চুক্তিটি করা হয়। ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক এই চুক্তিটির কার্যকারিতা শুরু হয়।
এই চুক্তি অনুযায়ী, উন্নত দেশগুলোর ২০১২ সালের মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ কমানোর কথা ছিল। তবে ২০১২ সালে এসে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি। তাই কপ-১৮ সম্মেলনে চুক্তির মেয়াদ আট বছর বাড়ানো হয়, যা ২০২০ সালে শেষ হয়। তবে, ওই সময়েও লক্ষ্যমাত্রা পূর্ণ হয়নি।
২০১৫ সালে ২১তম কপ সম্মেলনে ‘প্যারিস চুক্তি’ নামের একটি নতুন চুক্তি হয়। যেখানে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবেলায় দ্রুত কাজ করতে হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয় এই চুক্তিতে।
চুক্তির লক্ষ্য ছিল, এই শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প যুগের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি না হওয়া। এছাড়া, আগের চুক্তি (কিয়েটো প্রটোকল) যা অর্জন করতে পারেনি, তা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করে অর্জন করা সম্ভব বলেও আশা করা হয়।
১১ নভেম্বর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে কপের ২৯তম সম্মেলন। এতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা গণমাধ্যমকে বলেছেন, এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হল জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্বেগ ও দাবিগুলো অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করা।
সম্মেলনে বাংলাদেশ নয়টি দল তৈরি করেছে। এই দলগুলো জলবায়ু অর্থনীতি, ক্ষয়-ক্ষতি, প্রশমন (কমানো), এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার (অভিযোজন) মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।
কপ-২৯ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তত ২৯টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশ নেওয়ার কথা সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।