ছড়ায় ছন্দে সাবলীল গতিতে সুকুমার বড়ুয়া ফুটিয়ে তোলেন জীবনের কথা। কৃত্রিমতা বর্জিত তার লেখাগুলোতে যেমন ফুটে ওঠে সমাজের সমস্যার কথা তেমনি তা ভরপুর হয়ে থাকে হাস্যরসেও। আজ এই ছড়াকারের ৭৮তম জন্ম বার্ষিকী।
Published : 05 Jan 2016, 10:31 AM
চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি জন্ম নেন তিনি। কৈশোর থেকে দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করেই বড় হয়েছেন। লেখালেখি শুরু করেন ২০ বছর বয়সে। প্রথম ছড়া ‘বৃষ্টি নেমে আয়’ প্রকাশিত হয়েছিল খেলাঘরের পাতায়। প্রায় ৫৬ বছর ধরে একাধারে ছন্দের জাদু দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার একাধিক লেখা স্কুলেও পড়ানো হয়।
পরিহাসের ভেতর দিয়ে খুব গুরুগম্ভীর বিষয়কে তুলে ধরায় তার জুড়ি মেলা ভার। বর্তমানে হাতে হাতে মোবাইল দেখে সেটা নিয়েও তিনি ছড়া লিখেছেন। যেমন তার ‘হ্যালো’ ছড়ায় লিখেছেন-
'হ্যালো-হ্যালো-হ্যালো
তুমি নাকি সারাদিন
ভ্যানগাড়ি ঠেলো
ঘরে নাই চাল ডাল
সরিষার তেলও
লোন করে ফোন কিনে
কোন খেলা খেলো?
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ সবই নিজের চোখে দেখেছেন। আর এগুলোর প্রভাব রয়েছে তার লেখাতেও। পক্সে আক্রান্ত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারেননি বলে খেদ রয়েছে আজও।
হ্যালোকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি জানান, ছড়াকার হয়ে উঠার পেছনে মূলত নিজের সাধনাটাই ছিল সবার আগে। এছাড়া যাদের লেখা পড়তেন তাদের লেখা থেকেও অনুপ্রাণিত হতেন। সুনির্মল বসুর ‘হুলস্থূল’ ছড়াটি তাকে খুব প্রভাবিত করেছিল।
তার ছড়ার ভাঁড়ারে ব্যঙ্গরসাত্মক লেখা বা রম্যছড়া রয়েছে অনেক। দারিদ্র্যকেও ফুটিয়ে তুলেছেন হালকা হাসির আড়ালে।
‘ঠিক আছে’ ছড়াটি পড়লে এর প্রমাণ মেলে।
অসময়ে মেহমান ঘরে ঢুকে বসে যান
বোঝালাম ঝামেলার যতগুলো দিক আছে
তিনি হেসে বললেন ঠিক আছে ঠিক আছে!
রেশনের পচা চাল টলটলে বাসি ডাল
থালাটাও ভাঙাচোরা বাটিটাও লিক আছে
খেতে বসে জানালেন ঠিক আছে ঠিক আছে!
মেঘ দেখে মেহমান চাইলেন ছাতাখান
দেখালাম ছাতাটার শুধু কটা শিক আছে
তবু তিনি বললেন ঠিক আছে ঠিক আছে!
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আন্দোলন-সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা, গ্রাম-শহর, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি সবই রয়েছে তার ছড়ায়।
তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৮টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- ঠুসঠাস, পাগলা ঘোড়া, লেজ আবিষ্কার, নদীর খেলা, চন্দনা রঞ্জনার ছড়া, ভিজে বেড়াল, ১০০ ছড়া, ১০১ ছড়া ইত্যাদি।
বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন এই গুণী সাহিত্যিক।
২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার শেষ বই, ‘লেজ আবিষ্কার’। অসুস্থতার কারণে ভাঁটা পড়েছে লেখালেখিতে। বলেন, একটা লেখা লিখতে গেলে ১০০টা লেখা পড়তে হয়। তা না হলে ভাবনা আসে না। আশপাশে কোনো পাঠাগারও নেই যে সেখানে যাবো। তাছাড়া প্যারালাইজড হওয়ার পর থেকে চলা ফেরায় খুব কষ্ট হয়।
শিশুকিশোরদের নিয়ে নিজ গ্রামে একটা পাঠাগার করার ইচ্ছা আছে তার।