"সবুজ পাতার খামের ভেতর হলুদ গাঁদা চিঠি লিখে কোন পাথারের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে?"
Published : 25 Nov 2021, 10:34 PM
কবি সুফিয়া কামালের হেমন্ত কবিতায় ফুটে উঠেছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে হেমন্তের চিরাচরিত শাশ্বত রূপ। প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মে ষড়ঋতুর এই বাংলায় কার্তিক-অগ্রহায়ণ এই দুই মাস মিলে হেমন্তকাল।
শরতের অপরূপ লাবণ্যের পরেই প্রকৃতি সেজে উঠেছে হেমন্তের মোহনীয় সাজে। গ্রাম বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত এখন সোনালী আভায় সজ্জিত। সবুজ ধানক্ষেত পরিপক্ক হয়ে সোনালী রং ধারণ করেছে। তাতে সকালের রোদের মিষ্টি পরশে পুরো মাঠ যেন হয়ে গেছে সোনাময়।
ঝড়-বৃষ্টি আর বন্যার সকল ভয় দূর হয়ে কৃষকদের মনে এখন সোনালী ফসল ঘরে তোলার আনন্দ। এই ঋতুতে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ জুড়ে সোনালী হলুদ রঙের শুধু ধান আর ধান। প্রত্যেকটি কৃষক পরিবারে এই সময়টা উৎসবের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। সোনালী ফসলের আভায় প্রত্যেক কৃষকের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক বয়ে যায়।
কৃষকেরা ব্যস্ত নতুন ফসল ঘরে তোলায়। আর কৃষাণীরা ব্যস্ত নতুন চালের পিঠাপুলি তৈরিতে। এ সময় ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা আরো নাম না জানা হরেক রকম পিঠার সুবাসে ম ম করে ওঠে গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘর।
নদী-নালা পুকুরের পানি এ সময় কমে আসে। তাই মাছও পাওয়া যায় অনেক। আইড়, বোয়াল, চিতল, বাঘাইড়, পুঁটি, টেংরা কত রকমের নাম না জানা মাছ। তাজা মাছে সাজানো জেলেদের ডালা।
হেমন্তের অনেক রূপ। খানিকটা ঠাণ্ডা, খানিকটা গরম, অনেকটাই নাতিশীতোষ্ণ। এ ঋতুর নবান্ন উৎসব কৃষাণ-কৃষাণীদের একটা স্বপ্ন। এ ঋতুতেই গ্রামে গ্রামে চলে বিয়ের আয়োজন। সব বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয় মেয়ে জামাইকে। নতুন চালের পিঠে, মুড়ি-মুড়কি দিয়ে চলে জামাই আপ্যায়ন।
হেমন্তের লাবণ্যে প্রত্যেকটি হৃদয় মুগ্ধ না হয়ে পারে না। কিন্তু ভয় হয়, যেভাবে পৃথিবীর জলবায়ু বদলাচ্ছে তাতে আগামীতে আমরা আমাদের এই আপন হেমন্ত ঋতুকে খুঁজে পাব তো? হেমন্তের রূপ-লাবণ্য প্রত্যেকটি হৃদয়কে উৎফুল্লতায় ভরিয়ে তুলবে তো?