চলতি বছরের মে মাসের ঘটনা। আম গাছের মগ ডাল থেকে কয়েকটি পাখির ছানা মাটিতে পড়ে যায়। পাখির ছানাগুলোর চিৎকার শুনে দয়া হয় লিয়ন নামের একটি শিশুর। দৌঁড়ে গিয়ে ছানাগুলোকে হাতে তুলে নেয় ও।
Published : 30 Aug 2018, 04:41 PM
পরে ছানাগুলোকে আবার তাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য মগডালে ওঠার চেষ্টা করে ও। প্রায় উঠেই গিয়েছিল মগডালে, পাখির বাসার কাছেই; কিন্তু সর্বশেষ চেষ্টা ব্যর্থ। পা ফসকে গাছের মগডাল থেকেই মাটিতে আছড়ে পড়ে সে।
মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। স্তব্ধ হয়ে যায় সবকিছু। ভেঙে যায় তার একটি হাত। জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে শুয়ে থাকে দিনের পর দিন। বেশ কিছুদিন পর লিয়নের জ্ঞান ফেরে। তবে সে কথা বলতে পারেনি, পারেনি হাসতেও। শুধু নীরবে তাকিয়েই থাকে লিয়ন। খেতেও পারে না সে। তার নাকের ভেতর নল ঢুকিয়ে প্রতিদিন তরল জাতীয় খাবার ও ঔষধ খাওয়ানো হয়।
প্রায় আড়াই মাস ধরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে ভর্তি রয়েছে লিয়ন।
ও সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ির ছোট ছেলে। বাবা নাই, মা মুক্তা রাণী দর্জির কাজ করেন।
মুক্তারাণী বলেন, শহরের সরকারপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া করে সন্তানদের নিয়ে থাকেন তিনি। সারাদিন বাড়িতে বসে দর্জির কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়েই সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে আসছেন।
ঘটনার পর লিয়নকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার করানোর পরামর্শ দেন। অর্থের অভাবে ঢাকায় না নিয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে ওকে।
মুক্তারাণী বলেন, “এত কষ্টের মধ্যে ছেলের এই অবস্থা। ছেলের চিকিৎসার জন্য ঘরের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করে দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশির কাছেও ঋণী হয়েছি অনেক।”
প্রতিদিন সাত থেকে আটশ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। এখন এমন অবস্থা, ছেলের ওষুধ কেনার মতো সামর্থ নেই তার। হাসপাতালে মা-ছেলের অসহায় অবস্থা দেখে কেউ সাহায্য সহযোগিতা করলে ছেলের ঔষধ বা খাবার কিনতে পারেন নতুবা আর কিছুই করার নেই অসহায় এই মায়ের।
হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মঞ্জুরুল মোর্শেদ বলেন, “আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি লিয়নের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স এন্ড হসপিটালে ভর্তি করানোর জন্য। সেখানে তার উন্নত চিকিৎসা হলে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।”