গ্যালিলিও গ্যালিলি নামে একাধারে একজন পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক পনের শতকে ইতালিতে জন্ম নেন।
Published : 15 Feb 2018, 09:16 PM
বাবার নাম ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি এবং মা গিউলিয়া আমানাটির সন্তান গ্যালিলিওর জন্ম ১৫৬৪ সালের ১৫ ফ্রেবুয়ারি।
সাধারণ শিক্ষা শেষ করার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু অভাবের কারণে পড়াশোননায় ইতি টানতে হয়।
পরে শিক্ষা শেষ করে, জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। আর গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও করেন।
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নতিতে তার অবদান জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
এরপর পরই দূরবীক্ষণ যন্ত্রের নানা উন্নতি সাধন করে গ্যালিলিও দূরবর্তী বস্তু, অন্তত ৩০ গুণ বড় করে দেখার ব্যবস্থা করেন।
এরপর সামনে আসে চাঁদের কলঙ্ক আবিষ্কার। দূরবীক্ষণযন্ত্রে চাঁদের মধ্যে বড় বড় কালো দাগ দেখে গ্যালিলিও সমুদ্র মনে করেছিলেন, পরে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে জ্যোতিষ্কদের প্রথম পর্যবেক্ষণের ফল ‘সাইডরিয়াস নানসিয়াস’ গ্রন্থে লিপিবব্ধ হয়। যা প্রকাশ করা হয়েছিল ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দে। চাঁদের পৃষ্ঠের খাদ, ছোট-বড় অনেক দাগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এই গ্রন্থে আলোচনা হয়। ভূপৃষ্ঠের মতো চাঁদের উপরিভাগে যে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, নদী, গহ্বর, জলাশয় প্রভৃতি দিয়ে তৈরি, গ্যালিলিও এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
খালি চোখে দেখা যায় না এরকম অসংখ্য নক্ষত্রের অস্তিত্ব দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে। এছাড়া তিনি বিষমতারা, নক্ষত্রপুঞ্জ এবং কয়েকটি নীহারিকাও আবিষ্কার করেছিলেন
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গ্যালিলিও প্রথম পর্যায়ে যে আবিষ্কারগুলো করেছেন তার মধ্যে বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আবিষ্কার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পরপর কয়েক রাত বৃহস্পতি গ্রহ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ খুঁজে পান। যেটি আবিষ্কারে প্রমাণ হয় যে, গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতি জ্যোতিষ্করা একমাত্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে, জ্যোতির্বিদদের এই মতবাদ সত্য নয়।
১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে গ্যালিলিও শনির বলয়ও আবিষ্কার করেন। একই বছরের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে গ্যালিলিও সর্বপ্রথম দেখেন সূর্যে কতগুলো কালো দাগ আছে। কিন্তু ১৬১২ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসের আগে তিনি এ আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেননি।
ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী টমাস হ্যারিয়ট, হল্যান্ডের জন ফ্যাব্রিসিয়াস ও জার্মানীতে শাইনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক পর্যবেক্ষণ করেন। তাদের আবিষ্কারের কথা গ্যালিলিওর আগেই প্রকাশিত হয়। এর ফলে সৌরকলঙ্ক আবিষ্কারের কৃতিত্ব হ্যারিয়ট, ফ্যাব্রিসিয়াস, শাইনার ও গ্যালিলিও প্রত্যেকেরই আংশিকভাবে প্রাপ্য।
পৃথিবীর গতি সম্পর্কে গ্যালিলিওর মতবাদের জন্য তার বিচার করা হয়। ঘোষণা করা হয় যে, এগুলো ভয়ঙ্কর এবং ধর্মদ্রোহীতার শামিল। ১৬৩২ সালের অক্টোবরে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। আদালত থেকে তাকে একটি দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। যেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় শপথের মাধ্যমে তাকে পূর্ববর্তী ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করতে হবে।
এই দণ্ডান্দেশের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্যই তাকে সিয়েনায় একঘরে জীবন কাটাতে হয়। ১৬৩৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি নিজ বাড়ি আরসেট্রিতে ফিরে যাবার অনুমতি পান।
১৬৪২ সালের ৮ জানুয়ারি আরসেট্রিতেই তিনি মারা যান।