রোজা পালনকারীদের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হল পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত থাকা।
Published : 04 Mar 2025, 09:59 PM
রোজার মাসে বিশ্বের বহু মুসলমান ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী দিনের বেলায় খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তবে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় এটি সবার জন্য সমান চ্যালেঞ্জের বিষয় নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল তাদের জন্য রোজা পালনের আগে প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে পুষ্টি ও পানিশূন্যতার ঘাটতির বিষয়ে বাড়তি সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন। 'ডোন্ট ড্রিংক ওয়াটার অনলি হোয়েন ইউ আর থার্স্টি অ্যান্ড আদার এক্সপার্ট-ব্যাকড হাইড্রেশন টিপস' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি কিছু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক মাইকেল পার্সকিন, যিনি বার্ধক্যজনিত রোগ ও ইন্টারনাল মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ। এই চিকিৎসক বলেন, কিছু মানুষের জন্য রোজা পালন করা শারীরিক অবস্থার কারণে অন্যদের চেয়ে কঠিন হতে পারে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, "ধরুন ৭৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি যিনি নিয়মিত হাঁটাচলা করেন, কোনো রোগের জন্য ওষুধ গ্রহণ করেন না, তার জন্য রোজা রাখা সহজ হবে। কিন্তু যদি একই বয়সের কোনো ব্যক্তি বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের জন্য রোজা পালন কঠিন হতে পারে।"
এই চিকিৎসক আরও বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত নিজের শারীরিক সক্ষমতা বিচার করে রোজা রাখা নিরাপদ হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
রোজা পালনকারীদের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হল পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত থাকা। কেননা পর্যাপ্ত পানি পান না করলে নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই পানিশূন্যতা এড়াতে বিশেষ সচেতনতা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদ নাজিমা কুরেশি বলেন, "বেশিরভাগ মানুষ রমজান মাসে পর্যাপ্ত পানি পান করার গুরুত্ব দেয় না, যা হজমের সমস্যা, ডিহাইড্রেশন এবং দুর্বলতার কারণ হতে পারে।"
ডা. মাইকেল পার্সকিন বলছিলেন, "ডিহাইড্রেশন শুরুতেই সামলে নেওয়া সম্ভব হলেও, দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে তা গুরুতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মাথা ঘোরানো, বিরক্তিভাব, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ও শরীর ভারী লাগা এর কিছু লক্ষণ।"
যদি চিকিৎসা না করা হয় তাহলে এটি আরো জটিল হতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, জানান তিনি।
পানি পানের সঙ্গে কিডনির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ও নেফ্রোলজিস্ট ডা. লামা নাজ্জাল বলেন, "পানির অভাবে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।"
রোজার আগে থেকেই পানি পানের পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। ডা. নাজ্জাল বলেন, "রোজা ভাঙার পর রাতে পর্যায়ক্রমে পানি পান করা উচিত। তৃষ্ণা লাগলেই পানি পান করবেন, এমন নয়; বরং নিয়মিত তরল গ্রহণ করা উচিত।"
ন্যাশনাল একাডেমি অব মেডিসিনের মতে, একজন নারীর প্রতিদিন ২ দশমিক ৭ লিটার এবং একজন পুরুষের ৩ দশমিক ৭ লিটার পানি পান করা উচিত।
এই বিষয়ে ডা. কুরেশি পরামর্শ দিয়ে বলেন, "সেহরিতে ৫০০ থেকে ৭৫০ মিলিলিটার পানি পান করুন, ইফতারের সময় ৫০০ মিলিলিটার পানি পান করুন এবং এরপর রাতের বাকি সময় পানি পান করতে থাকুন।"
এছাড়া তরমুজ, শসা, লেবুর মত অতিরিক্ত পানিযুক্ত ফল ও শাকসবজি খাওয়ারও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।