"দেশে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ অন্ধ, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কর্নিয়া নষ্টের কারণে অন্ধ।"
Published : 02 Nov 2024, 12:18 AM
মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে সচেতনতা কিছুটা বাড়লেও, প্রক্রিয়াটি সফলভাবে সম্পন্ন করা এখনও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। অনেকে আগ্রহী থাকলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা আমিনুর রহমান হৃদয়। পেশায় সংবাদকর্মী এই তরুণ ঢাকায় থাকেন। ২০২০ সালে তিনি মরণোত্তর চক্ষুদান করেন। তার সঙ্গে কথা বলেছে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয় জানিয়ে হৃদয় বলছিলেন, “মানুষ মরণশীল। কেউ যদি আমার মৃত্যুর পর আমার কর্নিয়া দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখতে পারে, এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই ভাবনা থেকেই আমি চক্ষুদানে আগ্রহী হই।”
এতে কোনো বাধা বা পরবর্তীতে সিদ্ধান্তহীনতার মুখোমুখি হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "আবেদনের সময় পরিবার থেকে দুজনের স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। বাবা-মা প্রথমে আতঙ্কিত ছিলেন। পরিবারের তিন সদস্যের মধ্যে বাবাকে রাজি করাতে না পারলেও, শেষে মা ও বোনকে রাজি করাতে পেরেছি। সিদ্ধান্ত বদল নয় বরং এখন পুরো শরীর দান করতেও রাজি আমি।"
গাজীপুরের বাসিন্দা জাহিদ হাসান সুমনের অভিজ্ঞতাও অনেকটা একই রকম। পেশায় তিনি একজন যন্ত্র প্রকৌশলী। তার পরিবারও প্রথমে চক্ষুদানের ব্যাপারে রাজি হতে চায়নি, তবে পরে এক নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় বুঝিয়ে রাজি করাতে সক্ষম হন।
এত কষ্ট করে কেন রাজি করালেন জানতে চাইলে তিনি হ্যালোকে বলেন, “আমার পাশের বাড়িতে একজন জন্মগত অন্ধ ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তার চলাচলের কষ্ট দেখেছি। সেখান থেকেই অনুভব করি যে, হয়ত আমার কর্নিয়া দিয়ে একজন অন্ধ ব্যক্তির উপকারে আসা সম্ভব।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানী চক্ষুদান সমিতি ১৯৮৪ সাল থেকে চক্ষু সংগ্রহের কাজ করছে। তাদের মতে, দেশে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ অন্ধ, যার মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কর্নিয়া নষ্টের কারণে অন্ধ। কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই পাঁচ লাখ মানুষের অন্ধত্ব মোচন সম্ভব।
সংগঠনটির সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী হ্যালোকে বলেন, "এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ চক্ষুদানে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে সুবর্ণা মোস্তফা, আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক পরিচিত মুখ রয়েছেন। তবে ৪০ বছরে আমরা মাত্র ১৩১টি কর্নিয়া সংগ্রহ করতে পেরেছি, কারণ অনেক পরিবার এখনও ভীতি থেকে অনীহা প্রকাশ করে।”
চক্ষুদান নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে 'অন্যের চোখে বাঁচি - মরণোত্তর চক্ষুদান’ নামের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
এর প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত দেব জানান, চক্ষুদান নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আগ্রহ তুলনামূলক বেশি তরুণদের মধ্যে।
তিনি হ্যালোকে বলেন, “সন্ধানী চক্ষুদান সমিতির বাংলাদেশে কর্নিয়া সংগ্রহ ও বিতরণের অনুমতি রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি, যেখানে ঘরে বসেই চক্ষুদানে নিবন্ধন করা যায়। এছাড়া আমরা ফেইসবুকে চক্ষুদান নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি, যেখানে বিভিন্ন জেলার স্বেচ্ছাসেবীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে।”
চক্ষুদান নিয়ে উৎসাহ যেমন রয়েছে, তেমনি কৌতূহলও লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক পোস্টের মন্তব্যে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, ইসলাম ধর্মে এর অনুমোদন আছে কিনা।
এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিক আহমদ বলেন, “ইসলামিক স্কলারদের আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী, যদি অঙ্গ প্রতিস্থাপন জনকল্যাণমূলক হয়, তবে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। একজন মানুষের উপকারে এলেও, সেটা তো জনকল্যাণ হিসেবেই বিবেচিত হবে।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।