মেয়ের বাবা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিলেন। যেখানে তিনি একই সঙ্গে দুটো অপরাধ করলেন!
Published : 15 Apr 2023, 07:55 PM
আমাদের সমাজে মেয়ে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের শিকার হয়। আমি আমার নিজের চোখে অনেকগুলো বাল্যবিয়ে সংঘটিত হতে দেখেছি। এর মধ্যে একটি বাল্যবিয়ের ঘটনা আমাকে খুব ভাবিয়েছে।
তখন বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ চলছে। আমার প্রতিবেশি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে তার বাবা মা বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবেশিরা যখন তার বাবা মায়ের কাছে জানতে চাইল, কেন মেয়েকে বাল্যবিয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তখন তার বাবা বললেন, 'এই করোনার সময়ে কে বাঁচে আর কে কখন মরে ঠিক নাই। আমার বড় মেয়েটাকে চোখের সামনে বিয়ে দিয়ে মরতে চাই।'
পাড়া পড়শিরা তার বাবাকে বোঝাতে চাইল যে, জীবন-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। এসব ভেবে মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া কোনোভাবে উচিত হবে না। তখন মেয়ের বাবা রেগে গিয়ে বললেন, 'আমার অভাবের সংসারে মেয়ে মানুষকে ঘরে রেখে পালতে পারব না।'
অথচ তিনি সে বিয়েতে মেয়ের জামাইকে যৌতুক হিসেবে দিলেন নগদ ৫০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে স্বর্ণের আংটি ও ঘরের আসবাবপত্র। এজন্য তাকে অন্যদের থেকে ঋণও নিতে হয়েছিল।
মেয়ের বাবা যৌতুক দিয়ে মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিলেন। যেখানে তিনি একই সঙ্গে দুটো অপরাধ করলেন!
বিয়ের আগে মুক্তা তার পরিবারকে বারবার করে বলেছিল যে, সে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু পরিবার থেকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার ফলে মুক্তার পড়াশোনা সেখানেই থেমে যায়।
বিয়ের পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউই আর ওই মেয়েকে পড়াশোনার সুযোগ দেয়নি।
বাল্যবিয়ের শিকার মুক্তা আজ ভালো নেই। প্রতিনিয়ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অন্যান্যদের দুর্ব্যবহার সহ্য করে বাঁচতে হচ্ছে তাকে। কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই মেয়েটিকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
বাল্যবিয়ের শিকার এক বছরের একটি ছেলে আছে। সন্তান জন্মদানের সময় মুক্তা উপযুক্ত পরিচর্যা ও সেবা কিছুই পায়নি। এমনকি সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন মুক্তার মা-বাবার উপরই।
মুক্তার বাল্যবিয়ের ঘটনা আমার শিশুমনকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল। আমার ইচ্ছে হয়েছিল, যে কোনো উপায়ে বিয়ের আয়োজনটা বন্ধ করে দেই। কিন্তু ছোট মানুষ হওয়াতে আমিও নিরুপায় ছিলাম।
মেয়েটি যদি পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেত, তাহলে আজ এমন দুর্বিষহ জীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হতো না।
আমাদের চারপাশে এমন অনেকে রয়েছে যারা বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে এভাবে অন্ধকারে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে প্রতিনিয়ত।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: গোপালগঞ্জ।