জাদুঘর ঘুরে আমি জানতে পেরেছি বাংলার নানা ঐতিহ্য সর্ম্পকে। দেখেছি বহু পুরাতন আসবাব, পোশাক, অলঙ্কার ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নানা প্রাণী।
Published : 30 Apr 2024, 04:44 PM
এপ্রিল মাসে ইউনিসেফের একটি অনুষ্ঠানে শিশু সাংবাদিক হিসেবে যোগ দিতে আমাকে ঢাকা যেতে হয়। এবার ঢাকা যাওয়াটা বেশ স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
কারণ এই ভ্রমণে আমার অনেক দিনের একটি ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। আগে যতবারই ঢাকা এসেছি তখন মনে হতো জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখব। কিন্তু সময় স্বল্পতায় কোনো বারই আসলে হয়ে ওঠেনি।
তাই এবার সময় পেয়ে আর সুযোগ হাত ছাড়া করিনি। ভাবলাম এসেছি যখন জাদুঘরে যাবই।
২৩ এপ্রিল আমি জাদুঘর দেখতে যাই। সঙ্গে ছিলেন আমার আম্মু, বোন ও বড় ভাই। আমরা ছিলাম মামার বাড়ি মিরপুর-১১ তে। সেখান থেকে মেট্রোরেলে করে শাহবাগ যাই। মেট্রোরেলে চড়াও একটি দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। শাহবাগে নেমে আমরা সোজা জাদুঘরে চলে যাই, এরপর টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করি।
শুরুতেই পড়তে হয় বিপত্তিতে। টিকিট চেকিংয়ের সময় গায়ের রং অত্যধিক ফর্সা বলে জাদুঘরের সিকিউরিটি আমাকে বিদেশি ভেবে পথ আটকে দেন। পরে জানিতে পারি বিদেশিদের টিকিটের মূল্য আলাদা হয়। তারপর বাংলা ভাষায় কথা বলে উনাকে প্রমাণ দিতে হয় আমি বাঙালি। এরপর সবাই একটু হেসে ফেললাম। অনেক জায়গাতেই আমাকে এই বিপত্তি পোহাতে হয়।
জাদুঘর মূলত দোতলা থেকে শুরু হয়েছে। শুরুতে বাংলাদেশের বড় মানচিত্র। সেখানে দায়িত্বরত একজনকে বাগেরহাটের নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি একটি সুইচ চেপে দিলেন। সঙ্গে মানচিত্রে বাগেরহাটের অবস্থানে বাতি জ্বলে উঠে।
এরপর দেখলাম গ্রাম বাংলার কিছু চিত্র। অঞ্চল ভেদে ছবিগুলো সাজানো হয়েছে। এগুলো দেখতে আমার খুবই ভালো লেগেছে।
তারপর সুন্দরবনের আদলে তৈরি ছোট একটি সুন্দরবনও আছে জাদুঘরে। সেগুলো দেখতে এতটাই সুন্দর আর বাস্তবমুখী, মনে হচ্ছিল আমি আসলেই সুন্দরবন চলে গেছি। আমি সুন্দরবনে গিয়েছি। তাই জাদুঘরের ছোট সুন্দরবনটির সঙ্গে মিল খুঁজে দেখছিলাম।
জাদুঘর ঘুরে আমি জানতে পেরেছি বাংলার নানা ঐতিহ্য সর্ম্পকে। দেখেছি বহু পুরাতন আসবাব, পোশাক, অলঙ্কার ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া নানা প্রাণী। দেখেছি অজগর সাপের চামড়া, তিমির কঙ্কালসহ নানা পশুপাখির কঙ্কাল। জেনেছি মুক্তিযুদ্ধ, পলাশির যুদ্ধ ও বাংলাদেশের নানা ইতিহাস। দেখেছি বাংলার প্রথম শহীদ মিনারের ভাঙা অংশ। বহু আগে রাজাদের ব্যবহৃত খাট, যুদ্ধের সামগ্রীসহ প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র, ঢেঁকি, পালকি ও নৌকা।
জানতে পেরেছি বাংলাদেশের নানা গুণী ব্যক্তিদের সর্ম্পকে। দেখেছি জয়নুল আবেদীনের নানা চিত্রকর্ম। আমার কাছে জাদুঘর ঘুরে অনেক ভালো লেগেছে। অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
জাতীয় জাদুঘর ঘুরে আমি দেশ ও ঐতিহ্য সম্পর্কে যা জেনেছি তা আগে বইয়ে পড়েছিলাম। জাদুঘরে ঘুরে এসে এখন বাংলাদেশের ইতিহাস আর সংস্কৃতি বিষয়ের পড়াগুলো আমার কাছে অনেক সহজ মনে হচ্ছে।
আমার মনে হয় সব শিক্ষার্থীর উচিৎ জাতীয় জাদুঘর ঘুরে দেখা। তাহলে সবার কাছেই ইতিহাস আর সংস্কৃতির বিষয়গুলো সহজ হয়ে যাবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১২। জেলা: বাগেরহাট।